রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অর্ধেকের বেশি প্রার্থী ব্যবসায়ী

তিন প্রার্থী কোটিপতি, ৪২ জনের আয় বেড়েছে । অনেক ভোটার মনে করছেন নির্বাচন পাতানো : ড. বদিউল আলম মজুমদার

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্ধেকের বেশি প্রার্থী ব্যবসায়ী

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর ২৫৪ জন প্রার্থীর মধ্যে অর্ধেকের বেশির পেশা ব্যবসা। চাকরির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন ২৩ জন। আইনজীবী প্রার্থী আছেন দুজন। এর মধ্যে ৭১ শতাংশ প্রার্থী ৫ লাখ টাকার কম সম্পদের মালিক। কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক রয়েছেন তিনজন।

২০১৭ ও ২০২২ উভয় নির্বাচনে ৬৩ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের দেওয়া দুই নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৪২ জন প্রার্থীর আয় বেড়েছে, সাতজনের আয়ের কোনো পরিবর্তন হয়নি, ১০ জনের আয় কমেছে।

এদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, এবারের রংপুর সিটি নির্বাচনে উত্তেজনা খানিকটা কম। ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কম। তিনি বলেন, ‘অনেক ভোটারই মনে করছেন, নির্বাচন পাতানো, কে নির্বাচিত হবেন, তা আগে থেকেই ঠিক করা।’

গতকাল অনলাইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বদিউল আলম এসব কথা বলেন। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হলফনামা পর্যালোচনা করে সেই তথ্য তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সুজন।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ কম। তারা বলছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রবল নয়। তাদের ধারণা, কী ফলাফল হবে আগে থেকেই নির্ধারিত। কোনো নির্বাচন নিয়ে এমন পরিস্থিতি কাম্য নয়। গতবারের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিল; আশা করি এবারও সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে। আশা করি প্রার্থীদের আয়কর বিবরণী কমিশনের ওয়েবসাইটে না দেওয়াটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়, যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয় তাহলে তা জনগণের বিরুদ্ধে যাবে। কমিশনকে আয়কর বিবরণী প্রকাশের আহ্বান জানান তিনি।

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে বদিউল আলম বলেন, সবই গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য না, না আর না। মনে হচ্ছে, গণমাধ্যমকর্মীদের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসির গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাওয়া প্রয়োজন, তার বদলে বিধিনিষেধ দিচ্ছে। সাংবাদিকদের ওপর আরোপ করা বিধিনিষেধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুজনের কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ। লিখিত বক্তব্য পড়েন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। প্রার্থীদের তথ্য তুলে ধরে সুজন জানায়, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর ২৫৪ জন প্রার্থীর মধ্যে অর্ধেকের বেশির পেশা ব্যবসা। চাকরির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন ২৩ জন। আইনজীবী প্রার্থী আছেন দুজন। এদিকে ২০১৭ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ব্যবসায়ী প্রার্থীর হার সামান্য হ্রাস পেয়েছে।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৭০ শতাংশ প্রার্থীর আয় ৫ লাখ টাকার কম। এর মধ্যে সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমানের নিজস্ব কোনো আয় নেই। নিজের আয়ের ঘর খালি থাকলেও, নির্ভরশীলদের আয় দেখিয়েছেন তিনি। তবে গত পাঁচ বছরে মোস্তাফিজারের সম্পদ বেড়েছে ১০৬ শতাংশ। মোস্তাফিজারের নিজস্ব আয় না থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে সুজন। সুজন বলছে, মেয়র হিসেবে বেতন-ভাতা গ্রহণ করেছেন মোস্তাফিজার। তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ২৫৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ৭১ শতাংশ প্রার্থী ৫ লাখ টাকার কম সম্পদের মালিক। অন্যদিকে কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক রয়েছেন তিনজন। আগের নির্বাচনের তুলনায় এবার স্বল্প আয়ের প্রার্থীর অংশগ্রহণ হ্রাস পেয়েছে বলে সুজনের বিশ্লেষণে এসেছে। প্রার্থীদের আয়কর বিবরণীর তথ্য প্রকাশ না করার বিষয়টিকে তথ্য গোপনের শামিল মনে করছে সুজন।

রংপুর সিটি করপোরেশনের ২০১৭ ও ২০২২ উভয় নির্বাচনে ৬৩ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। এই ৬৩ জন প্রার্থীর ২০১৭ সালের হলফনামার সঙ্গে ২০২২ সালের হলফনামার আয়ের তথ্য তুলনা করে দেখা যায়, ৪২ জন প্রার্থীর আয় বেড়েছে, সাতজনের আয়ের কোনো পরিবর্তন হয়নি, ১০ জনের আয় কমেছে।

সম্পদ বেড়েছে ৩৭ জনের। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমানে ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩০২ ধারায় মামলা রয়েছে পাঁচজনের বিরুদ্ধে। অতীতে মামলা ছিল ৩৫ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে। নির্বাচনে ২৫৪ জন প্রার্থীর মধ্যে অর্ধেকের বেশি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস ও এর নিচে। এমন প্রার্থীর সংখ্যা ১৪৬ জন। এর মধ্যে ৯৩ জন এসএসসি পাস, ৫৩ জন মাধ্যমিকের গন্ডি অতিক্রম করেননি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা ৭০।

সর্বশেষ খবর