রবিবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

পর্যটন কেন্দ্রে নতুন বছরের উচ্ছ্বাস

প্রতিদিন ডেস্ক

পর্যটন কেন্দ্রে নতুন বছরের উচ্ছ্বাস

নতুন বছর বরণে পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় নেমেছে মানুষের ঢল। কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, সাজেকসহ দর্শনীয় স্থানগুলো গতকাল পর্যটকদের উচ্ছ্বাসে মুখর ছিল। খবর পাঠিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা-

সাজেক : ভরা পূর্ণিমায় হ্রদের পানিতে মৃদু ঢেউ। জোছনার ঝলকানি। গিরি নির্ঝর ঝরনার রূপমাধুরী দেখতে পর্যটকদের ভিড় ছিল পাহাড়ে। রাঙামাটির সাজেক পাহাড়ে দাঁড়িয়ে গতকাল বছরের শেষ গোধূলি স্নানে মুগ্ধ ছিল পর্যটকরা। শহরের ব্যস্ততা, রুটিনবাঁধা জীবন, কোলাহল ছেড়ে পাহাড়, সবুজ আর মেঘের রাজ্যে ঘুরতে পরিবার-পরিজন হাজির হয়েছেন দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উচ্চতায় রাঙামাটি সাজেক। এখানে পাহাড়ে দাঁড়িয়ে হাত বাড়ালে ছোঁয়া যায় মেঘ। দেখা যায় গিরিখাদ, আঁকা-বাঁকা ছোট্ট নদী। প্রকৃতি এখানে নিজেকে উজার করে দিয়েছে। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা রূপের জৌলুস থাকে সারা বছরই। এখানে চলে পাহাড়, নদী আর হ্রদের মিলন মেলা। প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে আছে অদেখা ভুবন। তাই তো ঘুরে বেড়ানোর তালিকায় প্রথম স্থান সাজেক- বলছেন পর্যটকরাই। কথা হয় সাজেক বেড়াতে আসা পর্যটক সালমা রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাঙামাটি নামটা যেমন সুন্দর, তেমনি প্রকৃতির। তাই প্রতি বছর নিয়ম করে বছরের ঠিক শেষ সময়টাই রাঙামাটি আসা হয়। এখন সাজেক আরও বেশি প্রিয়। বছর শেষে সূর্য ¯œান করার অনুভূতিটাই আলাদা। একই কথা জানালেন আরেক পর্যটক তানভির আজাদ। তিনি বলেন, আকাশের মেঘ যেন উড়ে উড়ে এসে বসেছে পাহাড়ের কোলে। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলেই দেখেছি মেঘের চাদরে ঢাকা সাজেক। সন্ধ্যায় মেঘের লুকোচুরি, যা সাজেকের সবচেয়ে অন্যতম আকর্ষণ। মেঘ আর রঙের মিতালি। আর পাহাড় চূড়া থেকে নিচের গ্রামের দিকে তাকালে মনে হয় পটে আঁকা ছবি। এদিকে পর্যটক সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সাজেকের হোটেল-মোটেল মালিকরা। সাজেক বাঘাইহাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মেঘালয় রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী মো. জুয়েল বলেন, বছরের এ সময়ে পর্যটকদের সামাল দিতে অনেক কষ্ট হয়। থাকার জায়গা দিতে পারি না। শুক্র-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি আর বছরের শেষ দিন হওয়ায় সাজেকে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় জমেছে। সাজেকের রিসোর্ট ও কটেজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জেরী লুসাই বলেন, রিসোর্ট ও কটেজগুলোর ধারণ ক্ষমতার চেয়ে পাঁচ থেকে ছয়গুণ পর্যটক অবস্থান করছেন। আমরা তাদের রুম দিতে পারছি না। বাইরে তাঁবুতেও জায়গা হচ্ছে না। তবুও চেষ্টা করছি বছরের শেষ সময়টা পর্যটকদের ভালো কাটুক।

কক্সবাজার : বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম ঘটেছে। শীতের হিমেল হাওয়া ও শিশির ভেজা বালিয়াড়িতে পুরনো বছরের শেষ সূর্যাস্তের মহেন্দ্রক্ষণ উপভোগ করেছেন তারা। কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার জানান, কক্সবাজারে ৫ শতাধিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজে দেড় লক্ষাধিক পর্যটক ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে উন্মুক্ত কোনো অনুষ্ঠান না থাকলেও তারকামানের হোটেল-মোটেলগুলোতে সাজসজ্জার পাশাপাশি কনসার্ট ও রুম বুকিংয়ে বিশেষ ছাড়সহ নানা আয়োজন রয়েছে।

বাগেরহাট : সুন্দরবনে আগত এসব দেশি-বিদেশি (ইকো ট্যুরিস্ট) প্রতিবেশ পর্যটকরা বিলাশবহুল ক্রুজার ও লঞ্চযোগে ছুটে বেড়িয়ে উপভোগ করেছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ঢাকা থেকে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্র দেখতে আসা ইসমাইল হোসেন তমাল বলেন, ‘প্রকৃতির পাশে থেকে থার্টি ফাস্ট নাইট পালন করতে ছুটে এসেছি। আমাদের মতো অনেকেই এসেছেন’।

খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ির প্রত্যেকটি স্পটে এখন পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। ঢেউ খেলানি পাহাড় ও প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা। পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন জেলা পরিষদ পার্ক, আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, রিছাং ঝর্ণা ও মায়াবিনী লেকসহ সবকটি বিনোদন কেন্দ্রে। বাড়তি আনন্দ যোগ হয়েছে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পরিবেশনা চলছে পর্যটন আলুটিলা স্পটে।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে পর্যটকরা দেখতে পারেননি বছরের শেষ সূর্যাস্তের মনলোভা দৃশ্য। নতুন বছর বরণ করতে সাগরকন্যা কুয়াকাটায় ঢল নেমেছে পর্যটকের। কেউ ঘোড়ায় চড়ছেন, কেউ সৈকতে সাগরের ছোট ছোট ঢেউয়ে সঙ্গে গোসল করছেন। কেউ প্রিয়জনের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউবা আবার গা ঘেঁষে উপভোগ করছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সৈকতের জিরো পয়েন্ট, লেম্বুর চর, ঝাউবন, গঙ্গামতির লেক, কাউয়ার চর, মিশ্রিপাড়া, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, রাখাইন পল্লী এবং শুটকি পল্লী স্পটে ছিল পর্যটকদের উচ্ছ্বাসিত উপস্থিতি।

সর্বশেষ খবর