শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

তুরাগ তীরে মুসল্লির ঢল

খায়রুল ইসলাম ও আফজাল হোসেন, টঙ্গী থেকে

তুরাগ তীরে মুসল্লির ঢল

তুরাগ তীরে গতকাল মুসল্লির ঢল -রোহেত রাজীব

লাখো মানুষের পদভারে মুখর তুরাগ নদ ঘিরে ১৬০ একর এলাকা। ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরুর আগের দিন বৃহস্পতিবারই পুরো ময়দান মুসল্লিতে পূর্ণ হয়ে গেছে। প্রচ- শীত ও শৈত্যপ্রবাহ উপেক্ষা করে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানের চটের ছাউনির নিচে অবস্থান নিয়েছেন। মাঠের মূল অংশে মুসল্লিরা ঠাঁই না পেয়ে কামারপাড়া ও আশপাশের এলাকায় ফুটপাতে অবস্থান নিয়েছেন। আজ ইজতেমা মাঠেই জুমার নামাজে দেশের সর্ববৃহৎ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। কাকরাইল মসজিদের মাওলানা জোবায়েরের ইমামতিতে কয়েক লাখ মানুষ এই জামাতে নামাজ পড়বেন বলে ধারণা দিয়েছেন ইজতেমা আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. মাহফুজ। তিনি জানান, করোনার কারণে গত দুই বছর ইজতেমা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এবার আগেভাগেই মুসল্লিরা মাঠে এসে উপস্থিত হচ্ছেন। রবিবার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসল্লিদের এ আগমন অব্যাহত থাকবে। আগামী রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এদিকে, চার দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি শুরু হবে ভারতের বিশিষ্ট মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর অনুসারীদের ব্যবস্থাপনায় দ্বিতীয় পর্ব। ২২ জানুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার উভয় পর্ব। আজ শুক্রবার ফজরের নামাজের পর মাওলানা জিয়াউল হকের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন- ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা। অবশ্য গতকাল বাদ ফজর বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য আম বয়ান হয়েছে। ভোরে আম বয়ান করেছেন ভারত থেকে আসা মাওলানা আবদুর রহমান, বয়ানের বাংলা তরজমা করেছেন মাওলানা আবদুল মতিন। বাদ জোহর বয়ান করেন বাংলাদেশি মাওলানা রবিউল হক। বাদ আসর বয়ান করেন মাওলানা ফারুক, বাদ মাগবির বয়ান করেন মাওলানা ইব্রাহিম। এভাবে আগামী রবিবার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত চলবে তাবলিগের ছয় উসুলের বয়ান। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেমরা এখানে বয়ান করবেন। মূল বয়ান বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষা-ভাষীদের জন্য তাৎক্ষণিক তরজমা করে শোনানো হবে। বিশ্ব মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ ধর্মীয় মহাসমাবেসস্থলে গত বুধবার থেকেই মুসল্লিরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস-ট্রাক-ট্রেন যোগে দলে দলে আসতে শুরু করেন এবং জেলাওয়ারী নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নেন। রাতেই কানায় কানায় পূর্ণ হয় ইজতেমার মূল ময়দান। গতকাল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসল্লিদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ঢল নামে মুসল্লির। যারা জায়গা পাননি তারা পার্শ্ববর্তী কামারপাড়া ও মহাসড়কের পাশের ফুটপাত কিংবা খোলা জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের গণমাধ্যম সমন্বয়কারী মুফতি জহির ইবনে মুসলিম জানান, এখন পর্যন্ত ২৬টি দেশের প্রায় দেড় হাজার বিদেশি অতিথি ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে অবস্থান নিয়েছেন।

ইজতেমা সূত্রে জানা যায়, এবার দেশের মুসল্লিদের জেলাওয়ারী ৯১টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। ১৬০ একর খোলা ময়দানে বাঁশের খুঁটির ওপর পাটের চট দিয়ে টানানো হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। মুসল্লিদের বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ ছাতা মাইক। লাগানো হয়েছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতি। মুসল্লিদের পায়খানা-প্রস্রাব, অজু-গোসলের জন্য সব ধরনের আধুনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের জন্য টিনের ছাউনি দিয়ে আবাসস্থল করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠ ঘুরে দেখা যায়, এখানে আটটি সড়ক, পাঁচটি ভাসমান সেতুসহ মোট ১৩টি প্রবেশপথ রাখা হয়েছে। ইজতেমার নিরাপত্তার জন্য ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সাদা পোশাক ও পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগ ১৪টি কন্ট্রোলরুম তৈরি করেছে। র‌্যাবের কন্ট্রোলরুম রয়েছে। ডিএমপিও তার এলাকায় কন্ট্রোলরুম খুলছে। এ ছাড়া রয়েছে এসবি, এটিও, সিআইডি, নৌপুলিশ, রয়েছে অবজারভারভেশন টিম, র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল, ডগ স্কোয়াড টিম, মোবাইল প্যাট্রোল এবং বোম ডিস্পোজাল টিম।

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন : বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ময়দানের উত্তর পাশে অলিম্পিয়া মাঠে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসাপত্র ও ওষুধ বিতরণ ক্যাম্প উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মধ্যে হামদর্দ, ইবনে সিনা, গাজীপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্প রয়েছে। গতকাল যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকফ) বাংলাদেশ এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাকিম মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন রাসেল সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, হামদর্দ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) মাহবুবুল আলম চৌধুরী প্রমুখ। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ইজতেমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকছে। কয়েকটি স্তরের এ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ইজতেমা ঢেকে রাখা হয়েছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যেন ঘটতে না পারে, সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কর্মকান্ড সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় করে থাকে জেলা প্রশাসন। ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বিভাগীয় প্রশাসনের দিকনির্দেশনায় বিভিন্ন কাজ তদারকিসহ বিশ্ব ইজতেমার সব দিক পর্যবেক্ষণ করে জেলা প্রশাসন।

গাজীপুর সিটি মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, বিশ্বখ্যাত এই ধর্মীয় ইবাদত অনুষ্ঠানে আগত মুসল্লিদের যাতায়াত, থাকা-খাওয়া, পানি ও নিরাপত্তাসহ যাবতীয় বিষয় সুশৃঙ্খল রাখতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

ব্রিফিং প্যারেড : টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়াম মাঠে ব্রিফিং প্যারেড অনুষ্ঠানে গাজীপুর পুলিশ কমিশানার মোল্যা নজরুল ইসলাম পুলিশের উদ্দেশে বলেন, যার যার অবস্থান থেকে সঠিক দায়িত্ব পালন করবেন। ময়দানের ভিতরে কেউ লিফলেট বিতরণ কিংবা নাশকতা সৃষ্টির করে কিনা সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর