শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে যোগাযোগে বিপ্লব

২০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে সবকিছু

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে যোগাযোগে বিপ্লব

১০ বছর আগে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের মিরসরাই উপজেলায় পৌঁছতে লাগত ৪-৫ ঘণ্টার মতো। ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা ফৌজদারহাট আউটার রিং রোড নির্মাণের পর এখন যাত্রীদের বিমানবন্দরে যাতায়াতে লাগে মাত্র ১ ঘণ্টা। ওই সড়ক ব্যবহারের ফলে যাত্রীরা মূল শহরে না গিয়ে শহরের বাইরে দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন।

এ সংযোগ সড়কের মতো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হয়ে উঠেছে ফৌজদারহাট বায়জিদ সংযোগ সড়ক। আগে ঢাকা থেকে রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার যেতে চট্টগ্রাম শহর পার হতে ২-৩ ঘণ্টা বাড়তি সময় লাগত। ২০২০ সালে ৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সড়ক চালুর পর মাত্র ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম পার হওয়া যায়। শহর থেকে সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুরগামী যাত্রীরাও এ সড়কের সুফল পাচ্ছেন।

গত এক যুগে চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশ এলাকার যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এতে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণের এই নগরের যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। লাখো মানুষের কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হচ্ছে, পরিবহন ব্যয় কমেছে। পণ্যবাহী যান চলাচলে গতি এসেছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কগামী এবং কালুরঘাট শিল্প এলাকার অনেক ভারী যানবাহন পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট ও ফৌজদারহাট-বায়জিদ সড়ক ব্যবহারের ফলে শহরের সড়কের ওপর চাপ কমেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের কাজ শেষ হওয়ার পর এ অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাল খালাসের পর দ্রুত সময়ে কারখানায় যাচ্ছে। কারখানা থেকে রপ্তানি পণ্য বন্দরে নিতেও কম সময় লাগছে। মানুষের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। আউটার রিং রোড থেকে সাগরিকা পর্যন্ত ফিডার রোডের নির্মাণ শেষ হলে বাড়তি সুফল মিলবে। বে-টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু হলে রিং রোড আরও গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত এক যুগে যোগাযোগে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে তা আর অস্বীকারের সুযোগ নেই। বিমানবন্দরের যাত্রীদের জন্য আসা-যাওয়া এখন আগের তুলনায় সহজ। তবে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ দ্রুত শেষ করা দরকার। শহর থেকে সংযোগ সড়কে ওঠার জন্য বন্দর, হালিশহর এলাকায় আরও কিছু বিকল্প সড়ক হলে যোগাযোগে আরও গতি আসবে।’

এদিকে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। ইতোমধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা-কর্ণফুলীসহ পুরো এলাকার দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। শিল্পকারখানার মালিকরা সেখানে নতুন শিল্পের জন্য জমি কিনছেন। আনোয়ারায় চায়না ইকোনমিক জোনের কাজ চলছে। ব্যাংকসহ নানা আর্থিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছে। শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার ছয় লেন সড়ক চালু হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার কমবে।

চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ পরিবর্তন ২০০৮ সালের পর শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামকে বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন তাঁর প্রতিশ্রুতির ফসল। সত্যিকারের বাণিজ্যিক নগরীতে রূপান্তরের জন্য তিনি আরও প্রকল্পের অনুমোদন দিচ্ছেন। চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের চেহারায় দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে। যে পরিবর্তন হয়েছে তা একসময় কল্পনাও করা যেত না।’

এদিকে লালখানবাজার, কদমতলী ও বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মাণের পর নগরীর যানজট কিছুটা কমেছে। বর্তমানে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটারের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ ৭০ ভাগ শেষ। আগামী জুনের মধ্যে নিমতলা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলে বিমানবন্দরগামী যাত্রীরা অল্প সময়ে শহরে যাতায়াত করতে পারবেন। এ ছাড়া আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নগরে আসা-যাওয়া, চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস এলাকা এবং সার্বিক যোগাযোগে পরিবর্তনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন এ প্রকল্পের পরিচালক মাহফুজুর রহমান।

অন্যদিকে ২০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চন্দনপুরা থেকে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারের বাকলিয়া এক্সেস রোডের নির্মাণকাজও প্রায় শেষের দিকে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এ সড়ক খুলে দেওয়া হবে। ফলে নগরীর দক্ষিণ-পূর্বাংশের যোগাযোগে বিশাল পরিবর্তন আসবে। এ ছাড়া গত এক যুগে বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত ছয় লেনের সড়ক নির্মাণ, ফিশারিঘাট-নতুন ব্রিজ সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ বেশ কিছু প্রকল্পও যোগাযোগব্যবস্থার এ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া ছোট ও মাঝারি কিছু প্রকল্পের কাজ চলছে।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী যেসব সড়ক হচ্ছে সেগুলোর সুফল মিলছে। শহরে ঢোকা ও বের হওয়ার জন্য অনেক বিকল্প সড়ক আছে। বায়জিদ লিঙ্ক রোডে রেললাইনের ওপর ব্রিজ দ্রুত শেষ করা দরকার। কর্ণফুলী নদীর পাড়ের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করতে পারলে কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ নগরে না ঢুকেই ঢাকার রাস্তায় উঠতে পারবে।’

সর্বশেষ খবর