মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ছদ্মবেশে চুরি-ছিনতাই যখন পেশা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

ছদ্মবেশে চুরি-ছিনতাই যখন পেশা

কখনো বোরকা পরেন, কখনো মাথায় সিঁদুর ও হাতে শাঁখা পরে বের হন তারা। ঘুরে বেড়ান মাজার, মন্দির, মার্কেট ও হাসপাতাল-ক্লিনিকে। সুযোগ বুঝে চুরি-ছিনতাই করেন। তাদের টার্গেটে থাকেন নারীরা। ভিড়ের মধ্যে নারীদের গলার চেন, কানের দুল, ভ্যানিটিব্যাগ ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। ধরা পড়লে সংঘবদ্ধ চক্রের অন্য পুরুষ ও নারী সদস্যরা ‘সাধু সেজে’ তাদের হালকা মারধর করেন কিংবা পুলিশে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে ছাড়িয়ে নেন। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার চৈতন্য দেব মহাপ্রভুর মন্দিরে আয়োজিত বার্ষিক কীর্তন অনুষ্ঠান থেকে ওই চক্রের ২৪ নারী সদস্যসহ ২৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে একটি নারী চোরচক্র সিলেটে সক্রিয় রয়েছে। তারা প্রতি শুক্রবারে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ান। বোরকা ও হিজাবের আড়ালে মুখ ঢেকে তারা মাজারে আগত নারীদের ভ্যানিটিব্যাগ, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন চুরি করেন। এ ছাড়া ওই চক্রটি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নগরীর ব্যস্ততম হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ওত পেতে থাকে। ভিড়ের মধ্যে তারা কৌশলে নারীদের ভ্যানিটিব্যাগ খুলে ভিতর থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। এ ছাড়া ভিড়ের মধ্যে গলার চেন ও কানের দুলও ছিনিয়ে নেন চক্রের সদস্যরা। ‘অপারেশনের’ পরপরই তারা পরনের বোরকা বা হিজাব খুলে অন্য বেশ ধারণ করেন। ঈদ এলে এদের তৎপরতা বেড়ে যায় মার্কেটগুলোয়। প্রতি বছর রমজানের শেষ ১০ দিন যখন কেনাকাটার ধুম পড়ে তখন ওই চক্রের সদস্যরা মার্কেটে আসা নারী ক্রেতাদের টার্গেট করে তাদের টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করেন। মাঝেমধ্যে চোর চক্রের সদস্য ধরা পড়লে তাদের চক্রের অন্য সদস্যরা সাধারণ মানুষ সেজে এসে হালকা মারধর কিংবা পুলিশে দেওয়ার কথা বলে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। কদাচিৎ পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে গেলেও কেউ মামলা দিতে রাজি না হওয়ায় পরে তাদের ছেড়ে দেয়। ওই নারী চোর চক্রের সঙ্গে বেশ কয়েকজন পুরুষও রয়েছেন। মূলত পুরুষরা ‘শেল্টারদাতা’ হিসেবে কাজ করেন।

মন্দিরে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালে ওই চোর চক্রের সদস্যরা যখন সেখানে যান তখন তারা হিন্দু নারীদের বেশ ধরেন। পূজারি সেজে মন্দিরে ঢুকে চুরি করেন। রবিবার সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের মিশ্রপাড়া গ্রামে চৈতন্য দেব মহাপ্রভুর মন্দিরে বার্ষিক কীর্তন উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় যান। মাথায় সিঁদুর ও হাতে শাঁখা পরে পূজারি সেজে মন্দিরে গিয়ে চুরির চেষ্টা চালান। খবর পেয়ে পুলিশ মন্দির থেকে ২৭ জনকে আটক করে। এর মধ্যে ২৪ জন নারী। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১৭টি চেন, ১ জোড়া হাতের বালা, ৪ জোড়া চুড়ি, ১৪ জোড়া কানের দুল, নূপুর ৮টি, ৬টি শাঁখা ও ৭টি মোবাইল ফোন সেট। ওই চোর চক্রের সব সদস্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ধরমণ্ডল গ্রামের বাসিন্দা। আটকদের বেশির ভাগই এর আগে আরও কয়েকবার চুরির ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোলাপগঞ্জ সার্কেল) মো. আশরাফুজ্জামান জানান, এরা সংঘবদ্ধভাবে চুরি করে। এদের সবাই আন্তজেলা চোর চক্রের সদস্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সিলেটে এসে প্রায় ছদ্মবেশে চুরি করে। মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর