শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

চা উৎপাদনে উত্তরের পাঁচ জেলা

সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদিত হচ্ছে পঞ্চগড়ের সমতলভূমিতে সবচেয়ে বড় বাগানের সঙ্গে ক্ষুদ্র চা চাষিদের উদ্যোগে এ এলাকায় প্রতি বছর চা উৎপাদন বাড়ছে

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

চা উৎপাদনে উত্তরের পাঁচ জেলা

দেশের উত্তরাঞ্চলের চা উৎপাদন এবারও জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় হয়েছে। এ নিয়ে টানা তিন বছর থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে উত্তরের পাঁচ জেলার চা উৎপাদন। তবে সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদিত হচ্ছে পঞ্চগড়ের সমতলভূমি থেকে। বৃহৎ বাগানের সঙ্গে ক্ষুদ্র চা চাষিদের উদ্যোগে এই এলাকায় প্রতি বছর চা উৎপাদন বাড়ছে। বাড়ছে চা বাগান। ক্ষুদ্র চা চাষিরা কাঁচা চা পাতার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না এমন অভিযোগও রয়েছে। গত তিন বছর ধরে তারা লোকসান গুনছেন। অনেকে চা বাগানের জমিতে অন্য ফসল চাষাবাদে ঝুঁকছেন।

পঞ্চগড়ের বড় চা বাগান ও ক্ষুদ্র চাষিদের বাগান থেকে ২০২৩ সালে সবুজ চা উৎপাদিত হয়েছে ৭৩ কোটি ৮ লাখ ২৭৭ কেজি। এই সবুজ চা পাতা থেকে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭ কেজি চা পাতা হয়েছে। এই জেলায় নিবন্ধিত বাগান রয়েছে ১ হাজার ৪৬৫টি। আর ৫ হাজার ৮৫৫টি অনিবন্ধিত বাগান আছে। জেলায় নিবন্ধিত চা স্টেট ৮টি এবং অনিবন্ধিত ২০টি। ১০ হাজার ২৬৭ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। অন্য চার জেলা ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও দিনাজপুরে প্রায় ১২ হাজার ১৩৩ একর জমিতে চায়ের আবাদ হয়। এসব চা বাগান থেকে ১২ কোটি ৩৪ লাখ ৬ হাজার ৪২৮ কেজি সবুজ চা পাতা উৎপাদিত হয়েছে। এসব সবুজ চা পাতা থেকে ২৫ লাখ ৭২ হাজার ১৭৩ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। উত্তর বঙ্গের সমতল এলাকার এই পাঁচ জেলা থেকে মোট ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি চা পাতা উৎপাদিত হয়েছে। যা ২০২২ সালের চেয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার কেজি বেশি। যেটি জাতীয় উৎপাদনের ১৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবারের মৌসুমে সারা দেশে মোট ১০ কোটি ২৯ লাখ ১৮ হাজার ৪৯৮ কেজি তৈরি চা উৎপাদিত হয়েছে। চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী উত্তরাঞ্চলের সমতল ভূমিতে ২০১৭ সালে ৫৪ লাখ ৪৬ হাজার কেজি তৈরি চা পাতা উৎপাদিত হয়। এই পাঁচ জেলায় ২৭টি চা কারখানা থেকে চা উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। চা বোর্ড ৫৮টি চা কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। চা চাষিদের অভিযোগ কারখানা মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে কাঁচা চা পাতার সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না তারা। এক কেজি সবুজ চা পাতা মাত্র ৮ থেকে ৯ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে তাদের। এতে খরচও উঠে আসছে না। অনেকে লোকসান গুনতে গুনতে চা বাগানও তুলে ফেলছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ একরের মতো চা বাগান থেকে গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। অথচ জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে চা মূল্য নির্ধারণ কমিটি প্রতি কেজি কাঁচা চাপাতার মূল্য নির্ধারণ করেছে ১৮ টাকা। অবশ্য চা চাষিদের এসব অভিযোগ মানতে নারাজ কারখানা কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন বৈশ্বিক সংকটের কারণে বাজারে চায়ের মূল্য কমে গেছে। হাত বা মেশিনের সাহায্যে দুটি পাতা একটি কুড়ি চা পাতা সরবরাহ করার কথা থাকলেও চাষিরা কাঁচি দা দিয়ে ৫-৬ পাতার কাঁচা চা পাতা কারখানায় সরবরাহ করেন। এ জন্য চায়ের মান খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আর তাই চায়ের নিলাম বাজারে উত্তরবঙ্গের চায়ের মূল্য কমে গেছে। তাই চাষিরা সঠিক দাম পাচ্ছেন না। সরকার নিলামকেন্দ্রে প্রতি কেজি চা পাতার মূল্য নির্ধারণ করলে সমস্যার সমাধান হতে পারে। ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ে তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এর আগে চট্টগ্রাম এবং শ্রীমঙ্গলের নিলাম কেন্দ্রে চা বিক্রি করতে হতো এ এলাকার কারখানা মালিকদের। তাতে পরিবহন খরচ পড়ত অনেক বেশি। পঞ্চগড় চা নিলাম কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৯টি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নিলামে সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা কেজি দরে তৈরি চা পাতা বিক্রি হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন উত্তরবঙ্গের চা শিল্পকে বাঁচানোর জন্য প্রশাসনিক উদ্যোগ প্রয়োজন। চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন জানান, উত্তর বঙ্গের চায়ের আবাদ দিন দিন বাড়ছে। এই এলাকার চায়ের গুণগত মান বাড়ানোর জন্য চা বোর্ড কাজ করছে। চা কারখানায় ভালো মানের চা পাতা উৎপাদনের জন্যও কাজ করছি আমরা।

সর্বশেষ খবর