রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঢাকায় কুকুর বিড়ালের হাতে আহত দিনে ৫০০ জন নেয় ভ্যাকসিন

সাইফ ইমন

রাজধানীতে প্রতিদিন কুকুর বিড়ালের আঘাতে আহত হচ্ছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। গতকাল মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধির হাসপাতালে দেখা গেছে ভ্যাকসিন নেওয়ার দীর্ঘ লাইন। রাজধানীর নানা জায়গা থেকে মানুষজন এখানে আসছেন ভ্যাকসিন এবং চিকিৎসা নিতে। তবে কুকুর বিড়ালের উপদ্রব বাড়লেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আরিফুল বাসার বলেন, বছর দুয়েক আগে প্রতিদিন ২০০ থেকে আড়াই শ মানুষ আসতেন আমাদের এখানে কুকুর বিড়ালের আঘাত নিয়ে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ আসছেন জলাতঙ্কের টিকা নিতে। তিনি আরও বলেন, নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে বিশেষ করে সিটি করপোরেশনগুলোতে কুকুর বন্ধ্যাকরণ বা স্থানান্তরের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তবে পশু অধিকারকর্মীদের বিরোধিতার মুখে সে উদ্যোগ স্থগিত রয়েছে। অবশ্যই তাদের হত্যা করা যাবে না, তবে কুকুর বন্ধ্যাকরণ প্রক্রিয়াটি কার্যকরা করা যেতে পারে যথাযথ পরিকল্পনা মাফিক। যেহেতু তারা বছর বছর একবারে অনেক বাচ্চা প্রসব করে, পাশাপাশি প্রকৃতির জীববৈচিত্র্য ঠিক রাখতে তাদের খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক লোকাল ভলেন্টিয়ার দেওয়া যেতে পারে। যেহেতু কুকুর বিড়াল এলাকা পরিবর্তন করে না। এ বিষয়ে সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে সুন্দর সুষ্ঠু সহাবস্থান তৈরি করা যায়। এতেই প্রকৃতির ভারসাম্য ঠিক থাকবে।

সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশেই কুকুরের আচরণ অস্বাভাবিক আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে কুকুর বিড়াল এবং মানুষের সুন্দর সহাবস্থান নিশ্চিত করার প্রতি তাগিদ দেন ডা. আরিফুল বাসার। তিনি বলেন, কুকুর বিড়াল এমনিতে শান্তিপ্রিয় প্রাণী। কিন্তু বেওয়ারিশ কুকুরের ক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে অনিশ্চিয়তা। কয়েক দিনের অভুক্ত কুকুরকে কেউ যখন উত্ত্যক্ত করবে তখন সে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতেই পারে। এ ক্ষেত্রে বেওয়ারিশ কুকুর বিড়ালের খাবার নিশ্চিত করতে হবে। প্রাণীদের প্রতি সদয় আচরণ করা উচিত। কুকুরের ভ্যাকিসিন নিশ্চিত করতে হবে। জলাতঙ্ক রোগে এখনো বিশ্বে প্রতি বছর ৫৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১০ সালের আগে জলাতঙ্কে প্রতি বছর ২ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হতো। টিকা কার্যক্রম শুরুর ফলে ধারাবাহিকভাবে কমেছে মৃত্যুর সংখ্যা। সারা দেশে সব হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এই দুই বছরে জলাতঙ্কে মৃত্যু হয়েছে ৮৬ জনের। মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ২০২৩ সালে চিকিৎসা নেন ৯৪ হাজার মানুষ। ২০২২ সালে চিকিৎসা নেন ৮৯ হাজার মানুষ। রাজধানী ঢাকা থেকে বেওয়ারিশ কুকুর স্থানান্তর করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কার্যক্রম শুরু করলে তা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে রিট করা হয়। প্রাণিকল্যাণ সংগঠন ‘অভয়ারণ্য’র সভাপতি রুবাইয়া আহমেদ, পিপলস ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ারের চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল ও অভিনেত্রী জয়া আহসানের পক্ষে ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব এই রিট করেন। প্রাণীপ্রেমী জয়ীতা রায় বলেন, প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে কুকুর বিড়ালের ভ্যাকসিন দিলে জলাতঙ্কের ঝুঁকি থাকে না। আমার বাসায় পোষা কুকুর এবং বিড়াল রয়েছে। এ ছাড়াও আমি রাস্তায় বেওয়ারিশ কুকুর বিড়ালেরও যত্ন নিয়ে থাকি। আমাদের সবার উচিত মানুষ হিসেবে অবলা পশুপাখির প্রতি সদয় ও মানবিক আচরণ করা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিডিসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১৭ লাখ কুকুর রয়েছে। ২০১১ সালে স্বাস্থ্য, প্রাণিসম্পদ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে জলাতঙ্ক রোগ নির্মূল কার্যক্রম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

কুকুরকে প্রতি বছর জলাতঙ্ক টিকা দিতে হয়। কিন্তু সরকারি তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের পর থেকে টিকাপ্রাপ্ত কুকুরের সংখ্যা কমছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে বাইরে লোকালয়ে কুকুর স্থানান্তরের কথা বলা হলেও কুকুরে কামড়ানোর ঘটনা এখন গ্রামেই বেশি ঘটছে। জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুরের কামড় বা আঁচড় ছাড়াও আক্রান্ত বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানর, বাদুড়ের মাধ্যমেও জলাতঙ্ক ছড়াতে পারে। আক্রান্ত স্থান কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধুয়ে যথা সময়ে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর