ভাঙ্গার কুমার নদে জমে উঠেছে নৌকার হাট। সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও সোমবার বসছে এ হাট। হাটের দিনে ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণে মুখরিত থাকছে হাটটি।
স্থানীয়রা জানান, হাটটি শতাধিক বছরের পুরনো। বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে হাতেগোনা যে কয়েকটি নৌকার হাট আছে তার মধ্যে এ হাট অন্যতম। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ও সোমবার ভাঙ্গায় হাট বসে। মে মাস থেকে এ হাটে নৌকা ওঠা শুরু হয়েছে। আগস্ট মাস পর্যন্ত চার মাস এ হাটে নৌকা বিক্রি হয়। সকাল ৭টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই বেচাকেনা চলে। ভাঙ্গা পৌরসভার ছিলাধরচর মহল্লার ঢাকা-বরিশাল এক্সপ্রেসওয়ের পূর্ব পাশে সড়ক ও কুমার নদের পাড়ে এ হাটের অবস্থান। গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধকিলোমিটার জায়গাজুড়ে নৌকা উঠেছে। নৌকার দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, দাম বেশি। বিক্রেতাদের অভিযোগ, দাম কম। এদিন হাটে দুই শতাধিক নৌকা ওঠে। নৌকা বিক্রি করতে আসা ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামের গৌতম মন্ডল (৫০) বলেন, গত এক মাসে আমি একজন সহযোগী নিয়ে ৩০টি কোশা (ছোট) নৌকা বানিয়েছি। চাম্বুল কাঠ দিয়ে এ নৌকাগুলো বানিয়েছি। আজ হাটে চারটি এনেছি। তিনটি বিক্রি করেছি। একেকটি তৈরি করতে ৪ হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়। ৫ হাজার টাকার ওপরে বিক্রি করতে পারি না। লাভ তেমন হয় না বললেই চলে। জগদীশ মন্ডল (৬৭) নামে আরেকজন বলেন, ‘আজ হাটে সাতটি নাও আনছি। দুপুর ১টা পর্যন্ত দুটি নাও ৯ হাজার ৪০ টাকায় বেচছি। দেশে পানি নাই। তাই দাম কম। লসের মুহে আছি। ৪৫ বছর ধরে ভাঙ্গার হাটে নৌকা বেচি। আগে আমার বাপ-দাদাও এ হাটে নৌকা বেচছে।’ নৌকার ব্যবসায়ী আমির খান (৫০) বলেন, ‘আমি নিজে নৌকা বানাই না। বরিশালের স্বরূপকাঠি উপজেলার একতা বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহে ৩০টি নৌকা কিনে আনি। ভাঙ্গার এই হাটে এক সপ্তাহে ৩০টি করে নৌকা বিক্রি করি। আবার আনি। সবই কোশা নৌকা। রেইন ট্রি ও চাম্বুল কাঠের তৈরি। স্থানীয় কারিগরদের বানানো নৌকার চেয়ে আমার নৌকার মান ভালো। আমি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিটি নৌকা বিক্রি করে থাকি।’
হাটের ইজারাদার হাফিজুল মিয়া বলেন, ‘এবার এ এলাকায় পানি কম ও মানুষের হাতে টাকা পয়সা কম। নৌকার বেচাকেনা অন্যান্য বছরের চেয়ে কম।’