কোটা আন্দোলনকেন্দ্রিক সহিংসতার কারণে উদ্ভব পাঁচ সমস্যার কথা কয়েকজন মন্ত্রী ও উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরে সমাধানের পথ চান দেশের ব্যবসায়ীরা। এগুলো হলো- বন্দরের জট, ঋণ পেতে সমস্যা, গ্যাস, বিদ্যুতের সংকট, ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট, সরবরাহ ব্যবস্থা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কেন্দ্রিক। গতকাল রাজধানীর বিনিয়োগ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠকে এসব সমস্যার কথা জানান ব্যবসায়ীরা। চলমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে করণীয় ঠিক করতে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এ সময় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ব্যবসায়ীদের পক্ষে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমসহ বোর্ড সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন খাতের অর্ধশত ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিল। এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে সৃষ্ট সমস্যা থেকে উত্তরণে করণীয় বিষয়গুলো নিয়েই বৈঠকে আলোচনা করেন ব্যবসায়ীরা। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে এফসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা বিভিন্ন খাত নিয়ে কথা বলেছি। এর মধ্যে বন্দরে কন্টেইনার জটসহ নানা ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বলেছি।
আন্তর্জাতিক শিপিং লাইনসগুলোর সমস্যা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। চাহিদামতো ব্যাংক ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। ঋণ পুনর্তফসিল ও সুদ মওকুফের কথা বলেছি। এ ছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেশি ও নিয়মিত গ্যাস না পাওয়া। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমদানি-রপ্তানিকারকদের আর্থিক ক্ষতি কমিয়ে আনতে বন্দর এবং শিপিং ড্যামারেজ চার্জ মওকুফ করার পাশাপাশি বন্দরে ক্লিয়ারিং কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার ১৫ দিন পর্যন্ত এই চার্জ মওকুফ করার দাবি জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ইন্টারনেট ছাড়া এখন ব্যবসা করা সম্ভব নয়। ছোট ছোট নারী উদ্যোক্তারা ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। তাই বিকল্প ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু করা যায় কিনা সে বিষয়ে মন্ত্রীর পরামর্শ চেয়েছি। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে করণীয় নির্ধারণে আলোচনা হয়েছে। মাহবুবুল আলম বলেন, সব বিষয় নিয়ে আমরা আলাদাভাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের পথ খুঁজব। এদিকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রায় ২ ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, আজকে ব্যবসায়ীরা বেশ খোলামেলা আলাপ করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে অন্তত পাঁচটি সমস্যার কথা উঠে এসেছে। আমরা এসব সমস্যার সমাধানে পৃথকভাবে আবার বসব। সালমান এফ রহমান বলেন, কারফিউ প্রতিদিনই শিথিল হচ্ছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। ব্যবসায়ীরা আজকে দিনের শেষে প্রতিটা খাতের ক্ষতির চিত্র লিখিতভাবে জানাবেন। পরে সেটা নিয়ে আগামীকাল (আজ সোমবার) মন্ত্রিসভার বৈঠকে কথা হবে।