টানা ১০ দিন পর মোবাইলে ইন্টারনেট চালু হয়েছে। চালু ফোর-জি সেবায় আপাতত ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটক বন্ধ থাকবে। তবে ফেসবুক চালু নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে আগামী ৩১ জুলাই বুধবার বৈঠকের পর। ওইদিন ফেসবুক আওয়ামী লীগের ৫০টি পেজ ও অ্যাকাউন্ট বন্ধ রাখা ও বিএনপির পেজ থেকে তারেক জিয়ার কনটেন্ট প্রচার করার বিষয়ে বৈঠকে ব্যাখ্যা দিতে ডাকা হয়েছে ফেসবুক
কর্তৃপক্ষকে। গতকাল বিকাল ৩টা থেকে মোবাইল গ্রাহকরা তাদের ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ ফিরে পেতে শুরু করেন। তবে প্রথম অবস্থায় গতি অনেকটাই কমছিল বলে ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট-সেবায় ইউটিউব দেখা গেলেও মোবাইল ইন্টারনেট-সেবায় ইউটিউব দেখা যাবে না। গতকাল সকালে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ-অ্যামটবের সঙ্গে এক বৈঠকের পর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিপ্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক মোবাইল ইন্টারনেট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আজ (রবিবার) বিকাল ৩টায় মোবাইল নেটওয়ার্কের ফোরজি কানেক্টিভিটি পুনঃস্থাপন করা হবে। অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকদের প্রত্যেকে তিন দিনের জন্য পাঁচ জিবি ডেটা বোনাস হিসেবে পাবেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফরম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে দেশজুড়ে সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে গত ১৭ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে পরদিন রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২৩ জুলাই রাতে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা হয়। পরদিন রাতে বাসাবাড়িতেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা সচল হয়। তবে গ্রাহকরা ধীরগতির অভিযোগ করেছেন। জানা যায়, গতকালের বৈঠকে অপারেটরদের ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এক দিন ও তিন দিন মেয়াদি ডেটা প্যাকেজ বানাতে অপারেটরদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এসব অ্যাপ বন্ধ রাখার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশনা ও পরামর্শক্রমেই প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছি। কোনো নির্দিষ্ট প্ল্যাটফরম, ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশনের কথা উল্লেখ করতে পারছি না। পলক আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমর্থনে কাজ করত এমন ৫০টি পেজ ও অ্যাকাউন্ট ফেসবুক বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু একই ধরনের কাজ বিএনপির পেজ থেকে বা সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়া যেসব কনটেন্ট প্রচার করছে, সেগুলো কেন বন্ধ করছে না? আবার শিশুদের অ্যাবিউজ, নারীদের প্রতি আক্রমণ, অসহিংসতা, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, গুজব প্রসঙ্গে তারা কোনো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখেনি।’ তিনি জানান, ৩১ জুলাই এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো পরিচালনাকারীদের ঢাকায় এসে ব্যাখ্যা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। তারা যুক্তি ও ব্যাখ্যা দিয়ে যদি বোঝাতে পারে যে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য করছে না, তাহলে আলোচনার ভিত্তিতে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার সম্পূর্ণভাবে কখনোই কোনো অ্যাপ বন্ধ করেনি। এটা নির্ভর করছে তাদের (ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটকের) আচরণের ওপর। তারা যদি দেশের আইন, সংবিধান ও নিরাপত্তা বিবেচনায় রেখে দায়িত্বশীল আচরণ করে, তাহলে বাংলাদেশে সবার সহযোগিতা পাবে। তাদের কাছে আইন মেনে তারা বাংলাদেশে সাইবার জগৎ ব্যবহার করতে চায় কি না, সে ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটককে গত শনিবার চিঠি দেওয়া হয়েছে বিটিআরসি থেকে। চিঠিতে গত এক মাসে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সহিংসতা ও গুজব ছড়িয়ে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো সরাতে অনুরোধ করা হয়েছে। যতটুকু সরানো হয়েছে, তা নগণ্য ও অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি জানান, অনেকেই অনেকভাবে অনেক অ্যাপ ব্যবহার করছেন। ভিপিএন ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে নিরাপত্তা বিবেচনায় রেখে এগুলো ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী জানান, সরকারের কেপিআইভুক্ত যেসব প্রতিষ্ঠান ও জরুরি সেবা রয়েছে, সেখানে সব সময়ই ইন্টারনেট চলমান ছিল। আমরা কখনোই ইন্টারনেট বন্ধ রাখার পক্ষে না। আমরা কোনো অ্যাপ বন্ধ রাখি না। তবে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কিছু কিছু জায়গায় সাময়িকভাবে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল।
এ সময় তিনি ১৮ জুলাই বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মহাখালীতে ডেটা সেন্টার ক্ষতি হওয়ার প্রসঙ্গ টানেন। এ ছাড়া সারা দেশে শত শত কিলোমিটার ফাইবার কেবল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান।