জাপানের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট ফুজি। যাকে জাপানিরা ফুজি সান নামেই ডাকে। ফুজি শুধু একটি পর্বত নয়, এটি জাপানিদের কাছে অন্যতম পবিত্র স্থানও। ঘুমন্ত এ আগ্নেয়গিরি ফুজিকে জাপানিরা সাহসের উৎসস্থলও মনে করে। তাই স্বাভাবিক সময়ে দেশি-বিদেশি পর্যটক ও পুণ্যার্থীদের ঢল নামে ফুজিতে।
বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ইন জাপানের সদস্য মোহাম্মদ সোলায়মান হোসেন সালমান বলেন, ‘ফুজি পর্বতমালাকে জাপানিরা সাহসের প্রতীক মনে করে। এটি জাপানিদের অন্যতম পবিত্র স্থানও। তাই প্রতি বছর লাখ লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক আসে ফুজি দর্শন করতে।’ জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে হনশু দ্বীপে অবস্থিত মাউন্ট ফুজি। ৩ হাজার ৭৭৬ মিটার (১২ হাজার ৩৮৯ ফুট) সৌন্দর্যময় এ পর্বতশৃঙ্গ জাপানিদের কাছে শুধু একটি পর্বত নয়। এটি তাদের জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতীকও। এটি জাপানের তিনটি পবিত্র পর্বতের মধ্যে একটি। এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত। বরফে ঢাকা এ ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরিকে ২০১২ সালে জাপানের ১১তম বিশ্ব হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে ইউনাইটেড ন্যাশনস এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ইউনেসকো)। আকাশ পরিষ্কার থাকলে সুদূর টোকিও থেকেও দেখা যায়। জাপানে আসা পর্যটক ও পর্বতারোহীদের কাছে মাউন্ট ফুজি একটি প্রিয় পর্বত। এ পর্বতশৃঙ্গের চূড়ায় আরোহণ করতে গেলে ১০টি স্টেশন পার হতে হয়। তবে পর্যটকরা গাড়ি নিয়ে পঞ্চম স্টেশন পর্যন্ত ওঠেন। অপরূপ সৌন্দর্যের পর্বতমালা ফুজি দেখতে প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক ছুটে আসেন। প্রতিবছর জুলাই থেকে আগস্ট মাসে ফুজি পর্বতারোহীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। বছরে প্রায় ৩ লাখ পর্বতারোহী জয় করেন ফুজি পর্বত। ফুজির পঞ্চম স্টেশনে গেলে দেখা মিলবে অপরূপ দৃশ্য। এ ছাড়া পঞ্চম স্টেশনে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ডাকঘর। রয়েছে ওয়ার্ল্ড কালচার হেরিটেজ এবং পর্বতে ওঠার জন্য রাস্তা তৈরিকারী শ্রমিকদের স্মরণে ম্যুরাল। ফুজি একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। যার সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটে ১৭০৭-০৮ সালে। মাউন্ট ফুজির জ্বালামুখটি আশ্চর্যজনকভাবে প্রতিসম। যা বছরের কয়েক মাস বরফাচ্ছাদিত থাকে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যদি মাউন্ট ফুজির প্রবল অগ্ন্যুৎপাত ঘটে তাহলে টোকিও শহরটি ছাইয়ের নিচে চাপা পড়বে। স্থানীয়দের দাবি, ৬৬৩ সালে এক ভিক্ষু প্রথমবার মাউন্ট ফুজি জয় করেন। তবে ৮৬০ সালে স্যার আলোক নামে এক বিদেশি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম ফুজি পর্বত আরোহণ করেন। ফুজি বা ফুজি সানকে জাপানি জনগণ সাহসের উৎস হিসেবে মনে করে। জাপানের শিল্পকলা ও স্থিরচিত্রে প্রায়ই ফুজিকে দেখা হয়। জাপানের গ্রীষ্মকালীন আতশবাজি উৎসব ‘হানাবির’ রাতেও আকাশে ঝলমল আতশবাজি দিয়ে ফুজি সানের আকৃতি জানানো হয়।