শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পরদিন গতকাল প্রশাসনের কেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয় ছিল থমথমে। পাশে আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে ধোঁয়া উড়ছিল। এতে একটু পর পর নানা আতঙ্ক বাড়ছিল কর্মকর্তাদের মধ্যে। এদিন সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাভাবিক উপস্থিতি থাকলেও বেশির ভাগ সচিব ও দলবাজখ্যাত দাপুটে কর্মকর্তা অফিস করেননি।
সচিবালয়ে পোশাকধারী কোনো পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারী দেখা যায়নি। গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। গতকাল সচিবালয়ের চিত্র ছিল এটি। এরপর দুপুর ১২টার দিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একসঙ্গে বের হতে শুরু করেন। সবাই হুড়োহুড়ি করে বের হতে গিয়ে সচিবালয়ের ভিতরে ও গেটে জটের সৃষ্টি হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সচিবালয় থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। দুপুরের মধ্যে গুজব ছড়ায় সচিবালয়ে হামলা হতে পারে। এ কারণে অনেকেই তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে যান।
বেশির ভাগ সচিব আসেননি অফিসে : এদিকে গতকাল সচিবালয় ছিল মন্ত্রিশূন্য। কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব অফিসে এলেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন সচিবসহ বেশির ভাগ সচিব অফিসে আসেননি। যারা এসেছেন তারাও কোনো পর্যায় থেকে নির্দেশনা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। কেউ কেউ একে অন্যের রুমে কথা বলে সময় কাটান, উদ্বেগও আছে তাদের মধ্যে। সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের সচিবদের পিএস এবং গুরুত্বপূর্ণ উইংয়ের কর্মকর্তারা সচিবালয়ে এলেও নিজ নিজ রুমে অবস্থান না করে অন্য রুমে সময় কাটান। তারা আশঙ্কা করেন, সরকার বদল হওয়ায় সদ্য সাবেক সরকারের সময় বঞ্চিত কর্মকর্তাদের কেউ কেউ অপ্রীতিকর ব্যবহার বা শারীরিক লাঞ্ছনা করতে পারেন।
সচিবদের মধ্যে শিক্ষা ও কারিগরি, ভূমি, পাট ও বস্ত্র, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, মহিলা ও শিশু, সমাজকল্যাণ, পানিসম্পদ, পাবর্ত্য, আইন, স্বরাষ্ট্র, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব সচিবালয়ে উপস্থিত হন বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সচিব জানান, ছুটি বাতিল হওয়ায় আমরা অফিসে এসেছি কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো নির্দেশনা পাচ্ছি না। আপাতত নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত কোনো পর্যায় থেকে নির্দেশ পাননি। নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানানো হয়েছে। অনেক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবরাও অফিস করেননি। সকাল থেকে বঞ্চিত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ভিড় করতে থাকেন। তবে এদিন অনেক কর্মকর্তাই অফিস করেননি। অনেককেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতাধর অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানাকে খুঁজতে দেখা যায়। শুধু জনপ্রশাসন নয়, অনেক মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা দেখানো উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা লাঞ্ছনার ভয়ে অফিসে আসেননি বলে জানা গেছে।
সচিবালয়ে বিভিন্ন ভবনে টাঙানো বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ছবি, ব্যানার নামিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে অন্যান্য কর্মকর্তারা স্বাভাবিকভাবেই অফিস করেছেন। দেশ নিয়ে নানামুখী আলোচনা করলেও কোনো ভয় ছিল না তাদের মধ্যে। একাধিক কর্মকর্তা বলেন, দলবাজি করি না, যখন যারা দেশ চালাবে আমরা তাদের নির্দেশ মানব। এটাই সরকারি কাজ। সুতরাং ক্ষমতা যেহেতু দেখাইনি, কোনো ভয় নাই।