সিপিডি সংলাপে বক্তারা সবকিছু ঢেলে সাজাতে একটি স্থায়ী সংস্কার কমিশন গঠন ও কমিশনের সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে একটি সাংবিধানিক আদালত গঠন করার প্রস্তাব করেছেন। একই সঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রণোদনা ও দুর্নীতি কমাতে রুলস অব বিজনেস পরিবর্তনেরও প্রস্তাব করা হয়।
গতকাল ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চ্যালেঞ্জ ও করণীয় : নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক সিপিডি সংলাপে বক্তারা এসব দাবি জানান। রাজধানীর হোটেল লেকশোরে সিপিডি এ সংলাপের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সংলাপে অংশ নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিমা ফেরদৌসী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত একটি স্থায়ী সংস্কার কমিশন গঠন করা। যার ভিতরে বাকি সব সংস্কারের আলাদা আলাদা শাখা থাকবে। যেমন শিক্ষা সংস্কার বা অন্যান্য যেসব সংস্কার দরকার সেগুলো আলাদাভাবে করবে এবং সংস্কার সব সময় চলমান থাকবে। অনেক দেশে স্থায়ী সংস্কার কমিশন আছে। দ্বিতীয়টি হলো সাংবিধানিক আদালত গঠন করতে হবে। কমিশনে যেসব আলোচনা হবে সেগুলো রেজ্যুলেশনে আনতে অথবা যখন ছোটখাটো কোনো সমস্যা উঠবে তখন সেগুলো সমাধান করতে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন আদালত। এটাও বিভিন্ন দেশে আছে। সুতরাং এই দুটি সংগঠনকে যেসব দেশ সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করছে তাদের অনুসরণ করে কমিশন গঠন যেতে পারে। রুলস অব বিজনেস পরিবর্তন করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখনো পাকিস্তান আমলের রুলস অব বিজনেস অনুসরণ করি মোস্টলি। ওটাকে সামান্য কাটাছেঁড়া করে যেখানে বাড়ানো দরকার বাড়ায়, যেখানে কমানো দরকার কমায়। সুতরাং সংস্কার করে বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসে স্বাধীন রুলস অব বিজনেস প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক বক্তার বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে এত বেশি প্রণোদনা। দুর্নীতিতে প্রণোদনা আবার বেতন দ্বিগুণ করে দেওয়া, ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে মোবাইল ফোন। অবিশ্বাস্য সুবিধা। এগুলো দিয়ে তো সরকারি চাকরিজীবীদের কিনে রেখেছে। সুবিধা কতটুকু দেওয়া যাবে এবং কতটুকু দেওয়া যাবে না। এসব জিনিসের ওপর রুলস অব বিজনেসে অনেক বড় পরিবর্তন আনতে হবে। বিডিজবসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ২০১৫ সালে পে-স্কেল চালু করে বেতন দ্বিগুণ করা হয়েছে। ৯০ শতাংশ মানুষ সরকারি চাকরিতে ঢুকতে চায়। এতে বেসরকারি খাতে কর্মীর অভাব তৈরি হয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কারা সেনা হেফাজতে আছে তার একটা তালিকা করা দরকার। এসব ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তারা যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, অর্থনীতির গতি আনতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবক্ষয়, আমদানিতে ক্রমহ্রাসমান প্রবণতা, টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমস্যাগুলো সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য আগামী তিন মাসের ভিতর জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট, রপ্তানি আয়ে ধীরগতি, রেমিট্যান্স প্রবাহে মন্থরতা, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে স্থবিরতার মতো সমস্যাগুলোর দ্রুত অবসানের তাগিদ জানান তিনি। সংলাপে আরও অংশ নেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, সাবেক অর্থসচিব মুসলিম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমদ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম প্রমুখ।