বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রাণ গেছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের। গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। এর পর থেকেই নতুন মাত্রা পায় কোটাবিরোধী আন্দোলন। পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
পুলিশের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া সাহসী এই যুবক পড়াশোনার পাশাপাশি শক্ত হাতে দায়িত্ব নিয়েছিলেন পরিবারের। আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় প্রাইভেট পড়িয়ে যে টাকা পেতেন তা দিয়েই চলত আবুু সাঈদের পরিবার।
আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। বাবা মকবুল হোসেন বলেন, আমার কলিজার টুকরা ছিল সাঈদ। তার প্রাইভেট পড়ানোর (টিউশনের) জমানো টাকায় চলতাম আমরা। সন্তান হারিয়েছি, এ শোকের কোনো সান্ত¡না নেই। পিতা হয়ে সবচেয়ে ভারী কাজ হলো সন্তানের লাশ কাঁধে নেওয়া। এখন শুধু সবার কাছে সন্তানের জন্য দোয়া চান বৃদ্ধ এ বাবা। আর এই হত্যার বিচার চান। আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন বলেন, আমার ভাই দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তার এই আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়। এ জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাড়িতে গেছেন। কবর জিয়ারত করেছেন। আরও যারা আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারকে সান্ত¡না দিয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লখযোগ্য- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, কোটা আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কসহ অনেকেই। আবু সাঈদ প্রমাণ করলেন যুগে যুগে বিপ্লব আন্দোলনের উর্বর ভূমি রংপুর।
স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর আগে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ রংপুর থেকে প্রথম শহীদ হন ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী শংকু সমাজদার, ৭১-এর ২৮ মার্চ রংপুরের মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করে শত শত মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। নুরুলদিন জংয়ে বাকের, দেবী চৌধুরাণী, ওয়ালিদাদ মাহামুদ, লালবিবিসহ অনেকেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হন। এরা সবাই রংপুরের মানুষ। আান্দোলনের জন্য তারা অকাতরে প্রাণ দিতে পারেন। এদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নতুন স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রাণ দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন আবু সাঈদ।