রাজধানীর রূপনগর সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী রিফাত তরফদার (১৮)। ৪ আগস্ট আন্দোলন চলাকালীন বেলা ১২টার দিকে মিরপুর-১০ এর গোলচত্বরের কাছে গুলিবিদ্ধ হয় রিফাত। কোমরে গুলি লেগে রাস্তায় পড়ে গেলে ডান কাঁধে ধারালো চাকু দিয়ে আর বাম হাতে স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করা হয়। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪২১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে রিফাত। তার বাবা মাহমুদ তরফদার বলেন, আমি একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কর্মরত আছি। রাজধানীর মিরপুর-১২ এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকি। দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে ছোট রিফাত। আন্দোলনে গিয়ে গুলি লাগলে ওখানে উপস্থিত ছাত্র-জনতা রিফাতকে পাশের একটা হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওর পকেট থাকা ফোন নিয়ে আমাকে কল করে জানালে গিয়ে দেখি কোমরে গুলি লেগেছে। ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে অপারেশন করে গুলি বের করেন চিকিৎসকরা। ছেলে ব্যথায় কাতরাচ্ছে দেখলে কষ্ট লাগে, তবে ছেলেকে নিয়ে গর্বও আছে।
গত শনিবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আন্দোলনে আহত হয়ে রিফাতের মতো চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ৪১ রোগী। কারও পিঠ দিয়ে ঢুকে পেট চিড়ে বেরিয়ে গেছে গুলি। গুরুতর আহত হয়ে ভর্তি হাসপাতালে। ঢাকার বাইরে থেকে অনেক আহত রোগী এসে ভর্তি হয়েছেন এ হাসপাতালে।
কুমিল্লার দেবিদ্বারে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী নাজমুল সাকিব মাহিম (১৮)। তার মা তাহমিনা বেগম বলেন, আন্দোলনে গিয়ে ৪ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয় মাহিম। পিঠ দিয়ে গুলি ঢুকে পেটের ভিতরে বিস্ফোরিত হয়েছে। ওইদিনই এ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। চিকিৎসকরা বলেছেন, গুলি বিস্ফোরিত হওয়ায় মাহিমের খাদ্যনালি থেকে শুরু করে অন্য অঙ্গপ্রতঙ্গে ২৩৪টি ছিদ্র হয়েছে। সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। আমার তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে মাহিম বড়। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৮ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন ঘিরে আহত ৫১৮ জন জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৬৫ জনকে ভর্তি করা হয়। ওই সময়ে বড় ধরনের অস্ত্রোপচার হয় ৩১ জনের। ছোট পর্যায়ে ১৫০ জনের অস্ত্রোপচার হয়েছে। আন্দোলন ঘিরে দ্বিতীয় ধাপে ৪ থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত দেড় শতাধিক আহত ব্যক্তি হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে ২৮ জনকে ভর্তি করা হয়। দুই দফায় ভর্তি রোগীদের মধ্যে এখনো ৪১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসপাতালের ৪২১ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, আহত সব রোগীই গুলিবিদ্ধ। এদের অনেকের দুই থেকে পাঁচবার পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। ভর্তি এসব রোগী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র, পোশাক শ্রমিক, দিনমজুর, শিশুসহ বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান হাসপাতালের বিছানায় শুনে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। কিছুক্ষণ আগে ড্রেসিং করে নিয়ে আসায় ব্যথার তীব্রতা আরও বেড়েছে। রাকিবুলের বাবা আবদুল জলিল ছেলের পাশে বসে ছিলেন। তিনি বলেন, দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে মিরপুর-১ এলাকায় থাকি। কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠানে রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করি। ছাত্র আন্দোলনে শুরু থেকেই যুক্ত ছিল অনিক। ৫ আগস্ট আন্দোলন চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হয়। তলপেটে গুলি লেগে বের হয়ে গেছে। অপারেশন হয়েছে, অনেক রক্ত লেগেছে। ছেলের সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগবে বলেছেন চিকিৎসকরা।