পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকায় আরও তিন হত্যা মামলা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও সিদ্দিরগঞ্জে দুটি মামলার খবর পাওয়া গেছে। এসব মামলায় সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি হারুন-অর-রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমারকে আসামি করা হয়েছে।
আদালত প্রতিবেদক জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিএনপি নেতাসহ তিনজনকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে আরও তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলা তিনটি করা হয়। এর মধ্যে দুটি মামলা ঢাকার মিরপুর মডেল থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ এবং অন্য মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিন মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ২২৮ জন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা অনেককে আসামি করা হয়েছে।
এর মধ্যে, ঢাকা মহানগর উত্তরের ১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল্লাহ কবির খানকে হত্যার মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৬৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী মো. ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী মো. কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক এমপি মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নান কচি ও যুবলীগ নেতা মেসবাউল আলম সাচ্চু। প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় আইডিয়াল স্কুলের সামনে আবদুল্লাহ কবির খান আন্দোলনে আহতদের সহযোগিতা করে রিকশায় তুলে চিকিৎসার জন্য পাঠাচ্ছিলেন। সে সময় শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ গুলি চালালে তিনি নিহত হন। এদিকে, আন্দোলন চলাকালে মিরপুরে লিটন হাসান লালু ওরফে হাসান নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৪৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। আদালত মিরপুর মডেল থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলায় আরও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান (নিখিল), ইলিয়াস মোল্লা, কামাল আহমেদ মজুমদার, আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি হারুন-অর-রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগ নেতা এস এম মান্নান (কচি)। বাদীপক্ষের আইনজীবী ইলতুৎমিশ সওদাগর এ্যানী মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে, শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় কাঠমিস্ত্রি তারিক হোসেনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
মামলায় আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি হারুন-অর-রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার।
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এতে আরও আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুসহ ১০৮ জনকে। গতকাল পাঁচলাইশ থানায় নগরীর মুরাদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরামের মা জোসনা বেগম এ মামলা করেন। পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ ১০৮ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সাবেক এমপি শামীম ওসমানসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত মাছ ব্যবসায়ী মো. মিলনের স্ত্রী মোসাম্মাৎ শাহনাজ বেগম বাদী হয়ে রবিবার দিবাগত রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এ মামলাটি করেন। মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক এমপি শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলের মতিউর রহমান মতি, শাহজালাল বাদল, নুর উদ্দিন মিয়া, রুহুল আমিন মোল্লা ও ইফতেখার আলম খোকন, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু, আওয়ামী লীগ নেতা জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়াসহ ৬২ জন।
শেখ হাসিনা ইনু মেননের বিরুদ্ধে গণহত্যার আরেক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে : পদত্যাগের পর দেশ ছেড়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৪ দলের নেতা হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর মিরপুরের দেশ পলিটেকনিকের নবম শ্রেণির ছাত্র নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা মো. আবুল হাসান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এ অভিযোগ করেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম এ তথ্য জানিয়েছেন।
আসামিদের নির্দেশে পুলিশের গুলিতে ৪ আগস্ট মিরপুরের দেশ পলিটেকনিকের নবম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার হাসান আলভী (১৫) নিহত হয় বলে অভিযোগ করা হয়। আবেদনে অন্য অভিযুক্তরা হলেন জেপির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও যুবলীগ সেক্রেটারি মাইনুল হাসান নিখিল। এ ছাড়া ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসংগঠন এবং অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগে আরও বলা হয়, ৩০ জুলাই আসামিরা আন্দোলন দমানো ও হত্যাকান্ড সংঘটিত করার জন্য বৈঠকে বসেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে শক্তি প্রয়োগ করে আন্দোলন দমানোর সিদ্ধান্ত নেন। এর আগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়। সেগুলোর তদন্ত চলছে।