সাড়ে তিন মাসের মাথায় আবারও বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে নতুন পর্ষদ গঠন করতে পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে। এবার পর্ষদ বাতিল করা হয়েছে নীতিনির্ধারণী দুর্বলতার কারণে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি, ব্যাংকিং সুশাসন ও শৃঙ্খলা বিঘ্ন করার মাধ্যমে ব্যাংক কোম্পানি এবং আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে পর্ষদ সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে।
গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ-সংক্রান্ত আদেশ দেওয়ার পাশাপাশি নতুন পর্ষদ গঠন করতে পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো সেই আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, নতুন পরিচালক করা হয়েছে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার আবদুল আউয়াল মিন্টু, উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন ও শেয়ারহোল্ডার জাকারিয়া তাহেরকে। জানা যায়, আবদুল আউয়াল মিন্টু ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতকল্পে নতুনভাবে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ গঠনের জন্য পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘ব্যাংকটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে কয়েকটি গ্রুপ। এখন এটিকে পুনর্গঠন করার বিকল্প নেই। সেটা করারই চেষ্টা করা হবে।’ এ ছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচাালক মো. জুলকার নায়েন, সীমান্ত ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুখলেসুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মেলিতা মেহজাবিন ও চার্টাড অ্যাকাউন্টেন্ট মো. আবদুস সাত্তার সরকারকে। এই সাত পরিচালকের মধ্য থেকে নতুন পরিচালক নির্বাচিত হবেন।
এর আগে চলতি বছরের ৫ মে আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ সংরক্ষণ ও সুশাসন নিশ্চিত করতে পর্ষদ ভেঙে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার, পরিচালক ও সিকদার গ্রুপের পারভীন হক সিকদার, স্বতন্ত্র পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম এবং সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেনকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারকে এনবিএলের চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ৫ মে ন্যাশনাল ব্যাংকের স্পন্সর পরিচালক খলিলুর রহমানকে পরিচালনা পর্ষদের নতুন চেয়ারম্যান করে বিলুপ্ত পর্ষদের দুই পরিচালককে নতুন পর্ষদে রেখেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজুল করিম, ব্যবসায়ী আরশাদ মাহমুদ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অধ্যাপক এ কে এম তোফাজ্জল হককে পরিচালক করা হয়েছিল। তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট রত্না দত্ত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদাকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নেওয়া হয়। গত ৯ এপ্রিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ন্যাশনাল ব্যাংককে ইউসিবির সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।