আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাঠ প্রশাসন ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তারই অংশ হিসেবে নতুন ডিসি নিয়োগ হচ্ছে। ২০ আগস্ট ২৫ জেলা প্রশাসক (ডিসি) প্রত্যাহার করা হলেও এখনো নতুন ডিসি পদায়ন হয়নি। কয়েক দিন ধরেই ডিসিদের ফিট লিস্টের অংশ হিসেবে সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। এ সপ্তাহেই প্রত্যাহার হওয়া জেলাগুলোয় নতুন ডিসি নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ডিসি নিয়োগ শেষে বিভাগীয় কমিশনার পদেও আনা হচ্ছে রদবদল।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে রদবদল শুরু হয়। ইতোমধ্যে প্রত্যাহার হওয়া ডিসিরা অনেক স্থানেই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব¡ বুঝিয়ে দিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। তবে নতুন ডিসি নিয়োগ না হওয়ায় মাঠ প্রশাসনের কাজেও বিড়ম্বনা হচ্ছে। কয়েক দিন ধরেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আলোচনা চলছিল প্রত্যাহার হওয়া জেলাগুলোয় ডিসি নিয়োগ নিয়ে। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমানের কাছে ডিসিদের নিয়োগ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিসিদের ফিট লিস্ট প্রণয়নের কাজ চলছে। যে জায়গাগুলো (২৫ জেলা) থেকে ডিসিদের প্রত্যাহার করা হয়েছে সেখানে এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে ডিসি পদায়ন করা হবে। একাধিক সূত্র জানান, আগামী বৃহস্পতিবার প্রত্যাহার হওয়া জেলাগুলোয় নতুন ডিসি নিয়োগের আদেশ হতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসূত্র জানান, অনেক স্থানেই মাঠ প্রশাসনে কাজের কিছুটা ব্যত্যয় হওয়াটা স্বাভাবিক। পর্যায়ক্রমে সব ডিসিকেই মাঠ থেকে উঠিয়ে আনা হবে। এ সপ্তাহেই নতুন কিছু ডিসি নিয়োগ পাবে মনে করছি। কয়েক জেলার ডিসিসহ মাঠ প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ডিসিসহ মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে যেসব কর্মকর্তা বর্তমানে রয়েছেন, তারা আর মাঠে থাকতে চাচ্ছেন না। তারা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এসব কর্মকর্তার মাধ্যমেই একতরফা নির্বাচন করা, বিরোধী পক্ষকে দমনপীড়নসহ বিভিন্ন অনিয়ম করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তা এখন মাঠ প্রশাসনে দায়িত্ব পালনে অস্বস্তিতে রয়েছেন।
জানা গেছে, দেশের ৬৪ জেলায় ডিসি পদে বর্তমানে তিনটি ব্যাচের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। ২৪, ২৫ ও ২৭ তম ব্যাচের কর্মকর্তা ডিসি হিসেবে আছেন। সাধারণত ডিসি পদে দুই বছর হওয়ার পর তাদের বদলি বা পরিবর্তন করা হয়। ২৪তম ব্যাচের ডিসিদের অনেকের দুই বছর সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। হিসাব অনুযায়ী, ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তাদের থেকে বেশি ডিসি হওয়ার কথা থাকলেও ২৪ ও ২৫ ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অনেকেই বলছেন পুরনো সরকার তাদের যোগ্যতার মূল্যায়ন করেনি। তাদের রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে ডিসি হওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এজন্য এসব ব্যাচ থেকেই বেশি ডিসি করার আলোচনা রয়েছে। সব ডিসি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে বিভাগীয় কমিশনারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদেরও বদলি করা হবে। আট বিভাগের মধ্যে ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কমিশনার ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা। বাকি ছয় বিভাগে ১৭ ব্যাচের কর্মকর্তারা বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভাগীয় কমিশনারদের পরিবর্তনসহ কাদের দায়িত্ব দেওয়া যায় তা নিয়েও কাজ চলছে বলে জানা গেছে।