গাজীপুরের টঙ্গীতে চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ১১টি পোশাক কারখানায় ভাঙচুর চালায়। এ অবস্থায় ১১টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে, সাভার ও আশুলিয়ায় শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস প্রদান, অর্জিত ছুটির অর্থ প্রদানসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে অন্তত ৩৬টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
টঙ্গী : চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে টঙ্গীতে বিক্ষোভ, কারখানায় ভাঙচুর করেছে চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে টঙ্গীর বিসিক এলাকায় এ বিক্ষোভে যোগ দেয় কয়েক শ শ্রমিক। এ সময় চাকরিচ্যুত বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ১১টি পোশাক কারখানায় ভাঙচুর চালায়। এতে দুই শ্রমিক আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত বাদশা মিয়াকে (২১) উদ্ধার করে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
গতকাল সকালে নিজ নিজ কারখানায় যথারীতি কাজে যোগ দেন টঙ্গীর বিসিক এলাকার পোশাক শ্রমিকরা। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিসিক এলাকায় বিভিন্ন কারখানার চাকরিচ্যুত প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক সংঘবদ্ধ হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে ১১টি পোশাক কারখানার গেটে অবস্থান নিয়ে কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দিতে আহ্বান জানান। এ সময় কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের ডাকে সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিক্ষোভকারীরা ১১টি কারখানায় ভাঙচুর চালায় এবং সড়ক অবরোধ করেন। পরে ভাঙচুর এড়াতে বেলা ২টার দিকে টঙ্গীর বিসিক এলাকার টসি নিট ফেব্রিক্স লিমিটেড, ন্যাশনাল কম্পোজিট লিমিটেড, পেট্রিয়ট ইকো এ্যাপারেল লিমিটেড, বেলিসিমা এ্যাপারেলস লিমিটেড, জিন্স অ্যান্ড পোলো লিমিটেড, টেঙ্গন গার্মেন্টস লিমিটেড, রেডিসন গার্মেন্টস লিমিটেড, সুমি এ্যাপারেলস লিমিটেড, আরবিএস গার্মেন্টস লিমিটেড, গার্ডেন টেক্সটাইল লিমিটেড ও তাজকিয়া এ্যাপারেলস লিমিটেড নামের ১১টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। চাকরিচ্যুত শ্রমিক মো. রনি বলেন, কারখানাগুলোতে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। নারী-পুরুষ সবার সমান অধিকার দিতে হবে। আমাদের দাবি না মেনে নিলে আন্দোলন চলবে। এ বিষয়ে তাজকিয়া এ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হেমায়েত উদ্দিন বলেন, সকালে বহিরাগতরা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে কারখানার প্রধান ফটকে ভাঙচুর চালায়। ভাঙচুর ও ক্ষতি এড়াতে কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছি। এ ব্যাপারে গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন বলেন, চাকরিতে বৈষম্য ও পুরুষ শ্রমিকদের নিয়োগে অগ্রাধিকারের দাবি জানিয়ে কয়েক শ চাকরিচ্যুত শ্রমিক কারখানায় ভাঙচুর চালায়। আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।
সাভার : শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস প্রদান, অর্জিত ছুটির অর্থ প্রদানসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে নিরাপত্তার স্বার্থে অন্তত ৩৬টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল সকাল ১০টা থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ী এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন জিএবি লিমিটেডসহ আশপাশের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। জিএবি লিমিটেডের শ্রমিকরা জানায় তারা কিছু যৌক্তিক দাবি উপস্থাপন করেছিলেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়ে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে।
অন্যদিকে আশুলিয়ায় ঘোষবাগ এলাকার নাশা গ্রুপের শ্রমিকরা টিফিন বিল বৃদ্ধি, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, বাৎসরিক অর্জিত ছুটির টাকা প্রদানের দাবিতে কারখানায় বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা সড়ক অবরোধের চেষ্টা চালালে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। জবাবে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পার্শ্ববর্তী হা-মীম গ্রুপ, নিউএইজ, আল-মুসলিম, জনরনসহ বেশ কিছু কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার স্বার্থে কারখানাগুলোতে ছুটি দিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাইকিং করে শ্রমিকদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
আশুলিয়ার শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, জিএবি লিমিটেডসহ স্নোটেক্স, স্টারলিং গ্রুপ, নাসা, হা-মীম গ্রুপ, আল-মুসলিম অ্যাপারেলস ও একমি অ্যাগ্রোভেট অ্যান্ড কনজুমারস লিমিটেডের কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তত ৩৬টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শিল্প পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
পোশাক শিল্পের নিরাপত্তায় যৌথ অভিযান - বিজিএমইএ সভাপতি : বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, পোশাক শিল্পের নিরাপত্তায় সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরে সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ যৌথ অভিযান চালাবে। গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, পোশাক শিল্পের নিরাপত্তায় সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরে যৌথ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রয়োজনে যৌথ অভিযানে পরবর্তীতে যোগ দেবে র্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। রফিকুল ইসলাম বলেন, কারখানাগুলোয় যাতে করে শ্রম অসন্তোষের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যারা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় তারা কেউ পোশাক শ্রমিক না। আজ পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে শিল্প মালিকরা। পরবর্তীতে আলোচনা করে কারখানা খোলা বা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এদিকে গতকাল বিকালে সচিবালয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর (বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন) শ্রমিক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আক্তার চৌধুরী বলেন, কারখানার ক্ষতি করে কোনো আন্দোলন করা যাবে না। বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কারখানায় হামলা বিশৃঙ্খলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ষড়যন্ত্র করে বহিরাগতরা অযৌক্তিক দাবি নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের চেষ্টা করছে। সে বিষয়ে উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়েছে।