ভারতে কর্মসংস্থানের জন্য এসে তিন বাংলাদেশি নাগরিক রুবেল, জাহাঙ্গীর ও শামসুল কীভাবে পাচারকারী চক্রের কবলে পড়ে কিডনি হারিয়েছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন।
ভারতীয় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ নম্বর ধারায় নথিভুক্ত তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তারা বলেছেন, চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের ভারতে নিয়ে আসা হয়েছিল। এরপর চাকরির বদলে কপালে জুটেছে দুর্ভোগ। মেডিকেল পরীক্ষার নাম করে তাদের শরীর থেকে বের করে নেওয়া হয়েছে কিডনি। এ বিষয়ে ৩০ বছর বয়সি রুবেল জানান, তিনি অবসাদগ্রস্ত এবং অসহায় অবস্থা কাটিয়ে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর যখন জ্ঞান ফিরে পান তখন অনুভব করেন তার শরীরে কিডনি নেই। আর এর ক্ষতিপূরণ বাবদ তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে ৪ লাখ টাকা।
বাংলাদেশে মা, বোন এবং স্ত্রীকে নিয়ে সংসার ছিল রুবেলের। সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা আনতেই তার এক পরিচিত ব্যক্তির পরামর্শে ভারতে আসার পরিকল্পনা করেন। রুবেল জানান, নিজের দেশে অগ্নিকান্ডে যখন তার কাপড়ের ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যায়, তখন তিনি একটি এনজিও থেকে ৮ লাখ টাকা ঋণ নেন। পরে ৩ লাখ টাকা শোধ করলেও বাকি টাকা শোধ করা সম্ভব হয় না। এ সময় তার এক বন্ধু তাকে ভারতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং সেই-ই তার পাসপোর্ট এবং মেডিকেল ভিসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। রুবেলকে বলা হয়েছিল, ভারতে তার জন্য চাকরি অপেক্ষা করছে। গত ১ জুন ভারতে আসার পর তাকে বলা হয়, কোনো চাকরি নেই। উল্টো টাকার বদলে শরীরের কিডনি দিয়ে দেওয়ার জন্য কিছু স্থানীয় লোক তার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। কিন্তু রুবেল তা দিতে অস্বীকার করায় তারা পাসপোর্ট, ভিসা আটকে রাখে। হুমকি দেয়, তাদের কথা মেনে না চললে ভারত থেকে বাংলাদেশে যেতে দেওয়া হবে না। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল ৩৫ বছর বয়সি জাহাঙ্গীরের ক্ষেত্রেও। জাহাঙ্গীর জানান, বিমানবন্দরে নামার পরই রাসেল ও মোহাম্মদ রোকন নামে দুই ব্যক্তি তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাদের সঙ্গে তিনি জাসোলার হোটেল রামপালে উঠেছিলেন। তারা জাহাঙ্গীরকে একটি হাসপাতালে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারতীয় নিয়ম অনুযায়ী ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়। গত ২ এপ্রিল তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ৩ এপ্রিল একজন নার্স শরীরে ইনজেকশন দেয়। এরপরই তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। ৫ এপ্রিল জ্ঞান ফেরার পর দেখেন পেটে একটি দাগ এবং সেলাইয়ের চিহ্ন। জাহাঙ্গীর বলেন, আমাকে জানানো হয় যে, আমার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। কিডনি নেওয়া হয়েছে। ৬ এপ্রিল রাসেল এবং তার সহযোগী সুমন আমাকে যশোলার হোটেলে স্থানান্তরিত করে। পরে রাসেল আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিশদ বিবরণ নিয়ে তাতে ৪ লাখ টাকা জমা দেয়। আমার পাসপোর্টটি তারা বাজেয়াপ্ত করে। তৃতীয় বাংলাদেশি শামসুলকে ভারতে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বেশ কিছু মেডিকেল পরীক্ষা করার জন্য নেওয়া হয়। শামসুল জানান, তারপর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার কিডনি নেই। আমাকে বলা হয়েছিল আমি কোনো সমস্যা ছাড়াই একটি কিডনি নিয়ে বাঁচতে পারব। কিডনির পরিবর্তে আমাকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, ওই ঘটনায় সম্প্রতি দিল্লির সাকেত আদালতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দীপ্তি ডেভেশ-এর এজলাসে ৭ হাজার পাতার চার্জশিট জমা দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। খুব শিগগিরই এই মামলার বিচার শুরু হবে।