অর্থনৈতিক সংস্কারের পূর্ণ রূপরেখা আসছে। এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে গঠিত একটি কমিটি। এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে। অবশ্য এ কমিটির নাম দেওয়া হয়েছে অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ কমিটি। এ কমিটি শুধু শ্বেতপত্র প্রকাশই করবে না। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের করণীয় সম্পর্কে একটি রূপরেখা দেবে। অর্থ বিভাগ সূত্র এসব তথ্য জানায়।
অর্থ বিভাগ বলছে, ইতোমধ্যে দুটি সভাও করেছে এ কমিটি। বিগত সময়ে দেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের লুটপাট হয়েছে, কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, কারা পাচার করেছে, কারা সহায়তা দিয়েছে, পাচার রোধে কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি- এসব তথ্য খোঁজা হবে। ব্যাংক খাতের অবস্থা কারা নাজুক করেছে, ব্যাংক খাত থেকে কী পরিমাণ অর্থ লুট করা হয়েছে, বড় বড় প্রকল্প নেওয়ার নামে বিগত সময়ে দেশের যে অর্থ লোপাট করা হয়েছে- তারও একটি বিবরণী তৈরি করবে একই কমিটি। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য সম্ভাব্য করণীয় সম্পর্কেও সুপারিশ করবে এ কমিটি।
দেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের সংস্কার আনতে হবে। কী করলে অর্থনীতির গতিধারা একটা টেকসই পথে এগোবে, একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের অনিয়ম করতে কেউ কখনো সাহস না করেন দায়ীদের কঠোর শাস্তি দিয়ে সে ধরনের উদাহরণ তৈরি করতে চায় সরকার।
সূত্র জানায়, ব্যাংক ও সামগ্রিক আর্থিক খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য করা হবে একটি ব্যাংকিং খাত সংস্কার কমিশন। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ইতোমধ্যে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। একই সঙ্গে সংস্কার আসবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও। রিজার্ভ চুরি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেইন অব কমান্ড নষ্ট করা, অন্য ব্যাংকে অনিয়ম হচ্ছে জেনেও চুপ থাকা কিংবা সহায়তা প্রদানকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি যারা অবসরে চলে গেছেন তাদের মধ্য থেকে কারও বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিগত সময়ে পাচার হওয়া অর্থ ও পাচারকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ থাকবে রূপরেখায়। ধরা হবে ব্যাংক খাতের লুটপাটকারীদের। গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, অবশ্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও সংস্কার আনা হবে। অতীতে যদি কোনো কর্মকর্তা বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চ পদস্থ কেউ কোনো অনিয়ম করে থাকেন আমরা সে বিষয়েও অনুসন্ধান করে তাদের শাস্তির আওতায় আনব। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোতে এ ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যেখানে প্রয়োজন মনে হবে সেখানেই পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে শ্বেতপত্র প্রকাশ ও অর্থনীতি সংস্কার প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য কয়েকদিন আগে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখা করে এ কমিটির কার্য পরিধির বিষয়ে ধারণা নেন। একই সঙ্গে তিনি কী কী কাজ করবেন, কোন প্রক্রিয়ায় করবেন- সে বিষয়েও উপদেষ্টাকে একটি ধারণা দিয়েছেন। পরে ড. দেবপ্রিয় গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার যে পরিধি বলে দেবে আমরা শুধু সে কাজই করব না। বরং আমরা যেখানেই যেভাবে প্রয়োজন মনে করব সেখানেই সংস্কারমূলক কাজের কথা বলব। এবং সে কাজটা আমরা করব। অর্থ বিভাগের আরেকটি সূত্র জানায়, এ কমিটি যেসব কাজ করবে তার মধ্যে রয়েছে- যেসব রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাংকার আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করবে। যারা অবৈধভাবে বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন, কালো টাকা আয় করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তাদের সম্পদের পরিমাণ নিরূপণ করে সে সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা বা দেশের স্বার্থে ব্যবহার করার বিষয়েও সুপারিশ আসতে পারে।
এ ছাড়া সম্পদের অপচয়, প্রকল্প অতিমূল্যায়ন, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নিয়ে সরকারি অর্থের লুটপাট যারা করেছেন তাদের ব্যাপারেও তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করবে এ কমিটি। বিগত সময়ে অর্থনীতির যেসব বিষয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছে যেমন, ব্যাংক খাতের লুটপাট, বিদ্যুৎ খাতের চুরি, রিজার্ভ চুরি, ব্যাংক দখল এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ দাখিল করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির সুপারিশ করা হবে বলে জানা গেছে।