গণপিটুনির শিকার হওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদ মারা গেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও একটি ভিডিও ছড়িয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, মাসুদকে ঘিরে ধরে আছেন অনেকে। শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে শনিবার বিকালে নগরীর বিনোদপুর বাজার এলাকায় মারধরের শিকার হন মাসুদ। নিহত আবদুল্লাহ আল মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়।
মাসুদের বাবার নাম রফিকুল ইসলাম। নিহত মাসুদ গত ৩ সেপ্টেম্বর এক কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছিলেন। সপরিবার চাকরির সুবাদে তারা বিনোদপুরে থাকতেন বলে জানা গেছে। বোয়ালিয়া থানার ওসি মাসুদ পারভেজ বলেন, আবদুল্লাহ আল মাসুদকে বিনোদপুরে মারপিট করা হয়েছিল। এরপর একদল শিক্ষার্থী তাকে প্রথমে মতিহার, পরে বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে যান। গুরুতর আহত দেখে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, নিহতের লাশ রামেক হাসপাতালে মর্গে রাখা হয়। মতিহার থানা এলাকায় মারধর করায়, ওই থানা পুলিশ তার সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা নিয়েছে। এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবদুর রহিম বলেন, ‘কারা যেন রাতে অটোতে করে মাসুদকে থানায় দিয়ে যায়। তারা তো পরিচয়ও দিল না। তখন পানি খাইতে চাইল। আমরা পুলিশকে পানি দিতে বললাম। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে বললাম। পরে রাতে চলে গেছি। সকালে শুনি মারা গেছে।’ এদিকে, একই দিন শনিবার বিকালে সানি ও কটা নামের দুই ব্যক্তি গণপিটুনির শিকার হয় ছাত্র-জনতার হাতে। সানি ও কটার বিরুদ্ধে গত ৫ আগস্ট আন্দোলন চলাকলে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে পেটানো হয়েছে। পরে তাদের নগরীর বোয়ালিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারা নগরীর পঞ্চবটি এলাকার বাসিন্দা। পরে তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিকালে নগরীর পঞ্চবটি পদ্মাপাড়ে এ ঘটনা ঘটে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমরা একটা মিটিংয়ে ছিলাম। হঠাৎ খবর এলো একজন ধর্ষক ধরা পড়েছে। এতদিন আমাদের কানে আসছিল গত ৫ আগস্ট একটা ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে সম্মানের ভয়ে কোনো মামলা হয়নি। আটক হওয়া সানি ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আরও ছয় থেকে সাতজনের নামও বলেছে। পরবর্তীতে তার তথ্যের ভিত্তিতে নদীপাড়ে কটাকে ধরতে যাই আমরা। এ সময় কটা নদীতে ঝাঁপিয়ে সাঁতার দিয়ে মাঝ নদীর চরে চলে যায়। পরে তাকে ধরে নিয়ে আসা হলে গণধোলাইয়ের মুখে পড়ে।’ বারবার ছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যার দাবি করলেও ওই ছাত্রীর পরিচয় জানাতে পারেননি সালাউদ্দিন আম্মার। এ বিষয়ে মতিহার থানা পুলিশের ওসি আরিফুল ইসলাম বলেন, আবদুল্লাহ আল মাসুদের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় দুপুর পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেনি কেউ। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।