গুম ঘর খুঁজে বের করা এবং নিখোঁজ ও গুম ব্যক্তিদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন গুম পরিবারের স্বজনরা। গতকাল দুপুরে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ গুম পরিবার’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ গুম পরিবারের প্রধান সমন্বয়ক ও লেক্সাস গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বেল্লাল হোসেন।
বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘জল্লাদের আয়নাঘর কোথায় কোথায় বানানো হয়েছে, বাংলাদেশে কতটি আয়নাঘর আছে? তা আমরা এখনো জানতে পারিনি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এসব বন্দিশালা উন্মোচন না করা হলে ডিজিএফআই ও র্যাবসহ সন্দেহভাজন সব বন্দিশালা ঘেরাও করার কর্মসূচি দেওয়া হবে। সব বন্দিশালা ভেঙে গুঁড়োগুঁড়ো করে দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে গত ২৭ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করে গেজেট আকারে প্রকাশ করে। সেই কমিশনকে ৪৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু ১৫ দিন পরও তারা কোথায় বসবে, কীভাবে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করবেন, এসব ব্যাপারে আমরা কিছুই জানতে পারিনি। একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাদের থেকে কোনো সদুত্তর পাইনি।
মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যতগুলো গুম, খুন, অপহরণ হয়েছে তার শতকরা ৭০-৮০ শতাংশ র্যাব করেছে। ক্রসফায়ারের নামে নাটক সাজিয়ে বিচার বহির্ভূতভাবে মানুষ মারা হয়েছে। এই সময়ে র্যাবের দায়িত্বে থাকা ডিজি, এডিশনাল ডিজি, ডিবির প্রধান ও ডিজিএফআই প্রধানদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে র্যাবকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন বাহিনী গঠন করতে হবে। কারণ বাংলার মানুষ র্যাবকে দেখতে চায় না। তারা একটি সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবে বিশ্বের দরবারে পরিচিত। তিনি আরও বলেন, গুম ও অপহরণ হওয়া প্রতিটি ব্যক্তিকে অতিদ্রুত তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। স্বজনহারা বা প্রতিটি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অতিদ্রুত মাসিক ভাতা চালু করতে হবে। বেল্লাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৬ সালে ১০ অক্টোবর র্যাব-১ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। এক মাস ১০ দিন আমার ওপর রোমহর্ষক নির্যাতন চালিয়েছে। আমি যতদিন সেখানে ছিলাম, শুধু কান্নার আওয়াজ পেয়েছি। আর মাঝেমধ্যে ঝিঁঝি পোকার শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ ছিল না। সেখানে ছোট ছোট ঘর। বাইরের কোনো আওয়াজ আসত না। তাদের নির্যাতনের প্রভাবে মা-বাবা বলে শুধু চিৎকার করত সবাই। অনেক শর্ত দিয়ে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে আমাকে ছাড়া হয়েছিল।