সরকারি দপ্তরের টেবিল, চেয়ার ও দরজার ঘুষ বন্ধে শুদ্ধি অভিযানে যাচ্ছে সরকার। বেনজীর, মতিউর, আছাদুজ্জামান মিয়া ও ফয়সালের মতো আর কোনো কর্মকর্তা যাতে সম্পদের পাহাড় গড়তে না পারে সেজন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিগত সরকারের আমলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষোভের কারণে প্রশাসনে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে তাও দূর করার কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সম্প্রতি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় ব্যবসা সংলাপে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে কীভাবে? এভরি টেবিল ওয়ানটস মানি, এভরি চেয়ার ওয়ানটস মানি, এভরি ডোর ওয়ানটস মানি। শুধু টেবিল চেয়ার ঘুষ খায় না, যে দরজা দিয়ে ঢোকেন সেই দরজাও ঘুষ খায়। এরকম সমস্যা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের যা যা সমস্যা আছে আমাদেরকে জানাবেন। আমরা টেবিল, চেয়ার, দরজার ঘুষ খাওয়া কঠোরভাবে দমন করব।’
এ বিষয়ে একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময়ের শাসনামলে প্রশাসনেও সরকারের পক্ষে বড় একটি গ্রুপ তৈরি হয়েছিল। তারাই ঠিক করে দিতেন কারা কখন কোথায় পদায়ন হবেন এবং পদোন্নতি পাবেন। এতে বঞ্চিতদেরও একটি পক্ষ তৈরি হয়েছে বাধ্য হয়েই। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরও যখন বঞ্চিত পক্ষ কোনো সুযোগ-সুবিধা ও প্রত্যাশিতস্থানে পোস্টিং পাচ্ছেন না, তখন তারা বিশৃঙ্খলা তৈরি করার চেষ্টা করছে।
আমলাদের ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, অনেকেই এক লাখ, দেড় লাখ টাকার মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। কিন্তু যারা সৎভাবে উপার্জন করেন তারা ২০-২৫ হাজার টাকার বেশি দামের মোবাইল ফোন কিনতে পারেন না। আমলাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সরকারের শাসনামলে অনেক যোগ্য কর্মকর্তা বঞ্চিত ছিলেন। আবার অনেকে ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে রাতারাতি বিলিয়োনিয়র হয়েছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের বঞ্চনা এবং দুর্নীতি যাতে না হয়, সে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই দফায় ৫১ জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে নিয়োগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে বিক্ষোভ ও হট্টগোল করেছেন নিজেদের বঞ্চিত দাবি করা কর্মকর্তারা। তাদের দাবি ছিল যারা বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ও আশীর্বাদপুষ্ট তারাই আবার ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা বিগত সরকারের আমলে বঞ্চিত হলেও তাদের জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, জেলা প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে একটি পক্ষ সচিবালয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছে, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকার সবকিছুতে শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজ শুরু করেছে, তবে বাস্তবায়নের জন্য সময়ের প্রয়োজন।