ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন নিয়ে দুই পক্ষে পৃথক সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে মসজিদ ও মাজার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য।
কিশোরগঞ্জ : জেলার কুলিয়ারচরে হক্ব ও তরিকতপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষে মীর মোহাম্মদ মিলন নিহত ও অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। নিহত মিলন ছয়সূতী পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও কুলিয়ারচর উপজেলা বিএনপির কার্যকরী কমিটির সদস্য। সোমবার বেলা ১১টার দিকে ছয়সূতী বাজারে জশনে জলুসে অংশগ্রহণকারী এবং ইমাম ও উলামা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষ চলাকালে তরিকতপন্থিরা ছয়সূতী বাজার জামে মসজিদ এবং হক্বপন্থিরা সৈয়দ আবু মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হামিদ (রহ.) মাজার ভাঙচুর করে। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে সৈয়দ আবু মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হামিদ (রহ.) মাজারে রবিবার ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এতে বাধা দেন কুলিয়ারচর ইমাম ও উলামা পরিষদের নেতারা। ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল গিয়াস উদ্দিন আত্ব-তাহেরী। তাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এ বিষয়ে ইমাম ও উলামা পরিষদের নেতারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি চিঠি দেন। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গিয়াস উদ্দিন আত্ব-তাহেরী কুলিয়ারচরে আসেননি।
এদিকে ইমাম ও উলামা পরিষদ এবং তরিকতপন্থিদের মধ্যে যাতে কোনো রকম সংঘাত সৃষ্টি না হয়, সেজন্য কিছু দিকনির্দেশনা দেয় কুলিয়ারচর প্রশাসন। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক তরিকতপন্থিরা সোমবার জশনে জলুসের মিছিল বের করে। মিছিলটি ছয়সূতী বাজার এলাকায় না যাওয়ার কথা থাকলেও তারা মিছিল নিয়ে সেখানে ঢুকে পড়ে। অপরদিকে ছয়সূতী বাজারে খাদেমূল ইসলাম হোসাইনীয়া হাফিজিয়া মাদরাসায় সিরাত মাহফিলের কথা ছিল। এ সিরাত মাহফিলও বন্ধ করে দেয় উপজেলা প্রশাসন। টানা ২/৩ দিন এ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। ইমাম ও উলামা পরিষদের নেতা মুফতি নাছির উদ্দিন রহমানিয়া জানান, প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা সিরাতুন্নবী মাহফিল বন্ধ রাখি। বেলা ১১টায় ‘বেদাতীরা’ পরিকল্পিতভাবে আমাদের মসজিদে হামলা চালায়। এ ঘটনায় বাজারের একজন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। সৈয়দ আবু মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হামিদ (রহ.) মাজারের খাদেম সৈয়দ ফয়জুল আল আমিন বলেন, আমাদের এখানে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে গিয়াস উদ্দিন আত্ব-তাহেরী আসার কথা ছিল। কিন্তু কিছু উগ্রপন্থি তাতে বাধা দেয়। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা তা মেনে নিলেও আমাদের ওপর তারা হামলা চালিয়েছে। মাজার ঘরটি ভাঙচুরসহ আরও ১০টি বাড়ি ঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : কসবায় ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন নিয়ে সোমবার দুপুরে উপজেলা কদমতলী এলাকায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও হেফাজত সমর্থিত সীরাতুন্নবী (সা.) উদযাপনকারী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে কয়ে দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আড়াইবাড়ী মাদরাসা, কোরআনের ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। এসময় দুই দলের সমর্থক ও গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে কদমতলী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে প্রায় তিন ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কদমতলী এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার।