লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ হামলায় গতকাল পর্যন্ত ৫৫৮ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৫০ জনই শিশু। এ ছাড়া এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৮৩৫ জন। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির বিভিন্ন অংশে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিরাপদ অবস্থানে থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাস। খবর আল জাজিরার। লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সকালে লেবাননের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে বেশ কয়েক দফায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর থেকে হিজবুল্লাহ লেবাননে যত অবকাঠামো তৈরি করেছিল, তা ধ্বংসের অভিযানে নেমেছে ইসরায়েল। দেশটির সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, এর মধ্যে হিজবুল্লাহর ১ হাজার ৩০০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে। ফলে হাজার হাজার পরিবার তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। হামলায় বিনতে জবেইল, আইতারুন, মাজদাল সেলেম, হুলা, তোরা, কলাইলেহ, হারিস, নাবি চিত, তারায়া, শ্মেস্টার, হারবাতা, লিবায়া ও সোহমোরসহ কয়েক ডজন শহরকে লক্ষ্য করা হয়েছে। একদিকে ইসরায়েল লেবাননে হিজবুল্লাহকে টার্গেট করে বিমান হামলা চলাচ্ছে। অন্যদিকে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিতে রকেট নিক্ষেপ করছে। এমন পরিস্থিতিতে ভয়াবহ সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র ম্যাথিউ সল্টমার্শ বলেছেন, লেবাননে বেসামরিকদের ওপর ইসরায়েলি হামলার ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। সল্টমার্শ জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার সারাদিন ও রাতে হাজার হাজার মানুষকে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে এমন এই সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগছি বলেছেন, লেবানন ও গাজায় ইসরায়েলি পদক্ষেপের ব্যাপারে তেহরান উদাসীন থাকবে না। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা এক বার্তায় তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় ইসরায়েলের অপরাধ বিশ্বের কাছে পরিষ্কার। এখান থেকে চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া লেবাননে গাজার মতো পরিস্থিতি হতে দেওয়া যাবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। তিনি বলেছেন, লেবাননকে আরেকটি গাজায় পরিণত হতে দেওয়া যাবে না। সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পেজেশকিয়ান বলেন, আমরা অবশ্যই ইসরায়েলের হাতে লেবাননকে আরেকটি গাজা হতে দিতে পারি না।
লেবানন প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য দূতাবাসের জরুরি বার্তা : লেবাননে অবনতি হওয়া নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিরাপদ অবস্থানে থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাস। একইসঙ্গে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দেশে ফেরত যেতে আগ্রহীদের জন্য বার্তা দিয়েছে দূতাবাস।
লেবাননের স্থানীয় সময় সোমবার এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে এ বার্তা দিয়েছে দূতাবাস। দূতাবাসের জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বছরখানেক ধরে চলমান হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি রাজধানী বৈরুতও ভয়াবহ আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং বিশেষজ্ঞরা সমগ্র লেবানন, বিশেষত দক্ষিণ ও পূর্ব লেবানন এবং বৈরুত আরও ভয়াবহ আক্রমণের শিকার হতে পারে বলে প্রতিনিয়ত আশঙ্কা প্রকাশ করে যাচ্ছেন, যা আজ বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। এ অবস্থায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপদ অবস্থানে থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য বিশেষভাবে পরামর্শ প্রদান করা যাচ্ছে। যেসব এলাকায় ভয়াবহ আক্রমণের কারণে অবস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না, সেসব স্থান থেকে বাংলাদেশি প্রবাসীদের ইতোমধ্যে দূতাবাস কর্তৃক প্রকাশিত বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গমন করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।