ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় একটি সোয়েটার কারখানায় বিনা নোটিসে ৬৩ জন শ্রমিককে ছাঁটাইয়ের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার আল-মুসলিম অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানায় শ্রমিকদের ওপর বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদে ভাঙচুরসহ এক কর্মকর্তাকে মারধর করেছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। ঘটনার পর নিরাপত্তার স্বার্থে কারখানাটি ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে, নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সাভার : আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার ‘ফ্যাশনইট কোম্পানি লিমিটেড’ কারখানায় বিনা নোটিসে ৬৩ জন শ্রমিককে ছাঁটাইয়ের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। কারখানার শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, সোয়েটার কারখানাটিতে প্রায় ১ হাজার ২০০ শ্রমিক কাজ করেছে। তখনো কেউ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়টি জানত না। সকালে কারখানায় এসে ৬৩ শ্রমিকের ছবিসহ ছাঁটাই এবং কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিস দেখতে পায়।
বরখাস্ত হওয়া শ্রমিক শাকিল হোসেন বলেন, আমরা কখনো কোনো শ্রমিক আন্দোলনে যাইনি। তারপরও কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে ছাঁটাইসহ কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। নোটিসে বলা হয়েছে, শ্রম আইন অনুযায়ী অবসান শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও ভাতাদি পরিশোধ করা হবে। আরেক নোটিসে কারখানার সব শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে চলমান সহিংসতা, বেআইনি ধর্মঘট ও বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ থাকবে। শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি মোবাইল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত কারখানাটিতে কাজ চলেছে। কিন্তু তখনো কোনো শ্রমিক কারখানা বন্ধ ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়টি জানত না। সকালে কারখানায় কাজে এসে মূল ফটকে বন্ধের নোটিস দেখে অবাক হয়ে যায়। তবে ৬৩ জন শ্রমিককে কী কারণে ছাঁটাই করা হয়েছে তা নোটিসে উল্লেখ করা হয়নি।
অন্যদিকে সকালে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার আল-মুসলিম অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানায় শ্রমিকদের ওপর বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদে কারখানা ভাঙচুরসহ এক কর্মকর্তাকে মারধর করেছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। ঘটনার পর নিরাপত্তার স্বার্থে কারখানাটি ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানায়, প্রতিদিনের মতো সকালে শান্তিপূর্ণভাবে কারখানায় কাজে যোগ দেয় শ্রমিকরা। প্রায় এক ঘণ্টা পর বহিরাগতদের হামলায় নাজমুল হোসেন নামে এক শ্রমিক আহত হয়। এ খবর পেয়ে হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিকদের বুঝিয়ে কাজে ফেরানোর চেষ্টা করলে তারা এক কর্মকর্তাকে মারধর এবং কারখানায় ভাঙচুর করে। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম¥দ সারোয়ার আলম বলেন, বিভিন্ন দাবিতে আল-মুসলিম অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা এক কর্মকর্তাকে মারধরসহ কারখানায় ভাঙচুর করে। এ জন্য কারাখানাটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া জামগড়া এলাকার ফ্যাশনইট কোম্পানি লিমিটেড কারখানার ৬৩ শ্রমিককে ছাঁটাই করে অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এর বাইরে শ্রম আইন অনুযায়ী ৫টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং ৪টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি শান্ত রাখতে কারখানাগুলোর সামনে অতিরিক্ত পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্য মোতায়েনসহ টহল কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
নারায়ণগঞ্জ : বকেয়া বেতন পরিশোধ, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ ও নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন নারায়ণগঞ্জের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকার নেমকন ডিজাইন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা এ কর্মসূচি পালন করেন। পরে তারা শহরের চাষাঢ়ায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। সেই সঙ্গে বিকাল পর্যন্ত অবস্থান শেষে তারা ফিরে যান। কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলীর নেমকন ডিজাইন লিমিটেড পোশাক কারখানায় ১ হাজার ৭০০ শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানটিতে তাদের তিন মাসের বেতন বকেয়া আছে। মালিকপক্ষ কথায় কথায় ছাঁটাই ও সন্ত্রাসীদের দিয়ে তাদের নির্যাতন করে। তাই অবিলম্বে বকেয়া বেতন পরিশোধ, ছাঁটাই বন্ধ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন।