৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পুলিশের অনেক সদস্য পালিয়ে যাওয়ার খবর এলেও র্যাবের কোনো সদস্য পালিয়ে যাননি বলে জানিয়েছেন বাহিনীটির মুখপাত্র লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের আগে ও পরে র্যাবের কোনো সদস্যই পালিয়ে যায়নি, কর্মবিরতিতেও যাননি। তিনি উল্লেখ করেন, র্যাবে ৮টি বাহিনী থেকে সদস্য আসে। ১০ হাজার সদস্যের মধ্যে প্রায় ৪৪ ভাগ পুলিশ বাহিনী থেকে এসেছে। র্যাবে কোনো সমস্যা ছিল না। ছাত্র-জনতার ওপর র্যাব কখনোই মারণাস্ত্রের গুলি ব্যবহার করেনি। তিনি বলেন, আমরা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে ছিলাম এবং অভ্যুত্থান সফল করতে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত র্যাব ১ হাজার ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ৩৯ জন উচ্চপর্যায়ের। পাশাপাশি অস্ত্র হাতে ছাত্র-জনতার ওপর গুলির ঘটনায় ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা থেকে উচ্চপর্যায়ের অনেককেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ ছাড়া আমরা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছি। র্যাবের কাছে কেউ যদি কোনো তথ্য দেয় তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। র্যাব সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে আছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ডিবির মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের মতো বিতর্কিতদের গ্রেপ্তারের বিষয় জানতে চাইলে মুনীম ফেরদৌস বলেন, তাদের বিষয় আমাদের কাজ চলছে। তথ্য পেলেই গ্রেপ্তার করা হবে।
এ ছাড়া একটি অপহরণ ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, এক নারীকে ধর্মের বোন বানিয়ে তারই ৮ বছরের সন্তান আবদুুল্লাহ আল নূর তুষারকে অপহরণ করে পালিয়ে যান হৃদয় (ছদ্মনাম) নামে এক যুবক। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তিতে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় যৌথ অভিযান চালিয়ে অপহৃত তুষারকে উদ্ধার করে র্যাব। যদিও অভিযানে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তিনি বলেন, হৃদয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় এক নারীর। একপর্যায়ে সে ওই নারীকে ধর্মের বোন বানান। একে অপরের সঙ্গে দেখাও করেন একাধিকবার। সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া তুষারকে নিয়ে রাজধানীর সদরঘাটের সোয়ারীঘাট এলাকায় হৃদয়ের সঙ্গে দেখা করতে যান সেই নারী। পরে চিপস কিনে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে তুষারকে অপহরণ করেন হৃদয়। ভুক্তভোগীর মা সন্তানকে খোঁজ করে না পেয়ে ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন। পরে ২ অক্টোবর ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। গত ২ অক্টোবর অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ভুক্তভোগীর মাকে ফোন করে মুক্তিপণের ২ লাখ টাকা দাবি করেন। মুক্তিপণের টাকা না দিলে তুষারকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। ভুক্তভোগীর পরিবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অপহরণকারীদের ৬ হাজার টাকা দেন। হৃদয় মুক্তিপণ আদায় করতে তুষারকে বিভিন্ন সময়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। পরে তুষারের বাবা র্যাব-২-এর কাছে ভুক্তভোগীকে উদ্ধারের জন্য লিখিত আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অপহৃত তুষারকে উদ্ধারে র্যাব সোচ্চার হয়। গত শনিবার রাতে র্যাব-২ ও ৮ এর যৌথ অভিযানে তুষারকে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার আমড়াগাছি হোগলপাতি নামক প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা পালিয়ে যান। অপহরণকারী হৃদয়ের আসল নাম বাদল। তিনি ছদ্মনামে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করেন। এতে তার স্ত্রীও তাকে সহযোগিতা করেন। এলাকায় তাদের অনেক দেনা রয়েছে। তাই প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন তারা।