বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্তিতস্কি বলেছেন, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে রাশিয়া বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। রাশিয়ার কৃষিপণ্যের রপ্তানির পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বেশি। ২০২৪ সালের শুরু থেকেই রাশিয়ার শস্য রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোতে রাশিয়ার রপ্তানির হারও ক্রমবর্ধমান। রাশিয়ার প্রধান রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে মিসর, তুরস্ক, ইরান ও বাংলাদেশ। গতকাল দূতাবাস থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করছি যে, গত কৃষি বছরে (জুলাই ২০২৩- জুন ২০২৪) রাশিয়া বাংলাদেশে ৩.৮ মিলিয়ন টন গম রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১.৮ গুণ বেশি। বাংলাদেশে রাশিয়ার শস্য সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং গুণগতমানের দিক থেকে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করা হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে রাশিয়ার খনিজ সার অপরিহার্য। বৈশ্বিক সার বাজারে রাশিয়ার অবদান প্রায় এক-পঞ্চমাংশ, যা বিশ্বের প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাশিয়ার কৃষিখাতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার পাশাপাশি, আমাদের বিশেষজ্ঞরা খাদ্য সরবরাহের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সঙ্গে একত্রে অনেক বছর ধরে কাজ করে আসছি ও প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে আসছি। এই খাতে আমরা ১২০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দ করেছি। এ ছাড়াও খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সঙ্গে মিলে মাটি সংরক্ষণ, প্রাণী ও উদ্ভিদ রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি কাজ করছি। আলেকজান্ডার মান্তিতস্কি বলেন, সম্প্রতি রাশিয়া ১৬০টিরও বেশি দেশে খাদ্য সরবরাহ বাড়িয়েছে। যার মধ্যে ১০০ মিলিয়ন টন খাদ্য এবং ৪০ মিলিয়ন টন সার রপ্তানি করা হয়েছে। ইউক্রেন সংকটের পরও রাশিয়ার রপ্তানিতে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি, বরং নতুন ও দীর্ঘমেয়াদি অংশীদার খুঁজে পাওয়ার মাধ্যমে রপ্তানি কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হয়।
গত পাঁচ বছরে রাশিয়া আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রায় ৩৮০ হাজার টন খাদ্য মানবিক সহায়তা হিসেবে সরবরাহ করেছে। এ ছাড়াও ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছয়টি আফ্রিকার দেশে ২০০ হাজার টন গম বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি মালাউই, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং নাইজেরিয়ায় ১১০ হাজার টন সার বিতরণ করেছি। বিশ্বের বৃহত্তম শস্য ও খনিজ সার রপ্তানিকারক হিসেবে, রাশিয়া বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যাগুলো সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো সরবরাহ শৃঙ্খলা ব্যাহত করছে, যার ফলে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে এবং এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর ওপর। এজন্য রাশিয়ার খাদ্য সরবরাহের জন্য একটি নতুন অবকাঠামো প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন, যার মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন এবং বিকল্প পেমেন্ট সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।