রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আবদুর রহমানের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনের (১৬) মৃত্যু হয়েছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে। ধারালো ও চোখা অস্ত্রের আঘাতে তার শরীরের তিন স্থানে রক্তনালি কেটে গিয়েছিল। এর ফলে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণও হয়েছিল।
গতকাল সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মর্গে লাশের ময়নাতদন্তের পর এ তথ্য জানানো হয়। ময়নাতদন্ত করেন ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক কফিল উদ্দিন। তিনি জানান, ‘তাওসিফের ডান ঊরু, ডান পা ও বাঁ বাহুতে ধারালো ও চোখা অস্ত্রের আঘাত পাওয়া গেছে। এ তিনটি জায়গায় রক্তনালি আছে। সেগুলো কেটে গিয়েছিল। এ কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণও ছিল শরীরে।’ তাঁরা মনে করছেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
জানা গেছে, ময়নাতদন্ত করতে প্রায় ৩০ মিনিট লাগে। এ সময় বাইরে অপেক্ষা করছিলেন তাওসিফের বাবা বিচারক আবদুর রহমান। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক কফিল উদ্দিন বেরিয়ে এসে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। এ ছাড়া পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন।
পারিবারিক সূত্র জানান, ময়নাতদন্ত শেষে সুমনের লাশ গ্রামের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার চকপাড়া গ্রামে নেওয়া হয়। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিকালে রাজশাহী মহানগরীর ডাবতলা এলাকায় ভাড়া বাসায় খুন হয় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমন। হামলাকারী লিমন মিয়া (৩৫) তাদের পূর্বপরিচিত।
জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্বেগ : হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের হেফাজতে থাকা হত্যাকারীর বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারকে তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। সে সময় দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আগামী রবিবার থেকে সারা দেশের বিচারকরা কলমবিরতি পালন করবেন বলে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রকাশ্য দিবালোকে বিচারক পরিবারে রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুরো বিচার বিভাগ স্তম্ভিত ও বাকরুদ্ধ। ন্যক্কারজনক এ ঘটনার তদন্তপ্রক্রিয়া ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতেই গ্রেপ্তার আসামিকে আদালতে সোপর্দ করার আগে বিধিবহির্ভূতভাবে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। উ™ূ¢ত পরিস্থিতিতে দেশের বিচারকরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। দেশের প্রত্যেক আদালত/ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ, এজলাস, বিচারকদের বাসভবন ও গাড়িতে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকারের কাছে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বারবার পত্র পাঠানো সত্ত্বেও সরকার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বিচার বিভাগের সদস্যরা রাষ্ট্রের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করলেও তাঁরা ও তাঁদের পরিবার অরক্ষিত ও নিরাপত্তাহীন। জেলা পর্যায়ের সব বিচারকের জন্য পর্যাপ্ত সরকারি আবাসন ও পরিবহনব্যবস্থা নেই। চৌকি আদালতে কর্মরত বিচারকদের অবস্থা আরও শোচনীয়। রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় বিচারকরা সর্বদা নিয়োজিত থাকলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিচারকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ রক্তের দায় কোনোভাবে এড়ানোর সুযোগ নেই। এ অবস্থায় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বিচারকদের কর্মের পরিবেশ ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকারের কাছে অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য দুটি দাবি উপস্থাপন করছে-সব আদালত, বিচারকের বাসস্থান ও যাতায়াতের সময় অবিলম্বে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী নিযুক্ত করতে হবে এবং রাজশাহীর ঘটনায় বিচারকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবহেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং গ্রেপ্তার আসামিকে আইনবহির্ভূতভাবে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে অপেশাদারি প্রদর্শনের দায়ে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি বাস্তবায়নপূর্বক বিচারকদের কর্মের পরিবেশ ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হলে আগামী রবিবার থেকে সারা দেশের বিচারকরা একযোগে কলমবিরতি পালন করবেন। সেই সঙ্গে বিচারক পরিবারের নিহত সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সব বিচারক নিজ নিজ কর্মস্থলে রবিবার কালো ব্যাজ ধারণ করবেন।’