৭ মে, ২০১৯ ২০:৪১

মোদিকে 'চড়' মারার কথা বললেন মমতা!

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

মোদিকে 'চড়' মারার কথা বললেন মমতা!

ভারতের চলমান লোকসভা নির্বাচনে মোদি-মমতা বাগযুদ্ধ অব্যাহত। ‘জয় শ্রী রাম’, ‘ফণী-ফোন’, নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই একে অপরকে লক্ষ্য করে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করছেন। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ঠাসিয়ে গণতন্ত্রের চড় মারার কথা বললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মঙ্গলবার পুরুলিয়া জেলার সাঁতুড়িতে বাঁকুড়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্র্রার্থী সুব্রত মুখার্জির সমর্থনে একটি নির্বাচনী প্রচারণায় এসে মমতা এসব কথা বলেন।  

নিজের রাজনীতি জীবনের কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘আমি ২৩ বছর সাংসদ ছিলাম। আপনারা হয়তো জানেন যে, আমি সাবেক সাংসদ হিসেবে গত আট বছরে এক লাখ পেনশন পাই। কিন্তু আমি এক পয়সাও পেনশন তুলিনি। এবার এক লাখ রুপিটা যদি আট বছরে গুণ করেন-সেটা এক কোটির মতো হচ্ছে। কিন্তু আমি কোনদিনই এই রুপি নিই নি। এছাড়াও আমি মুখ্যমন্ত্রী-তাই বিধায়ক হিসেবেও একটা বেতন, অন্য ভাতা পাই। সব মিলিয়ে মাসে যদি এক লাখ রুপি হয় তবে আট বছরে আরও এক কোটি রুপির কাছাকাছি পেতাম। আমি কিন্তু এক পয়সাও নিই না। তৃতীয়ত আমি দোকানে চা খেলে নিজের পয়সা দিয়ে খাই। সরকারি অথিতিশালায় উঠলেও সেখানে নিজের পয়সা দিয়ে খাই। এই রুপিটা আমি বই লিখে পাই। আমার ৮৮টা বই প্রকাশিত হয়েছে। এখান থেকে যা পাই, তাতে আমার চলে যায়। আমি গান লিখি, গানে সুর দিই তাতে আমার চলে যায়। আর ছবিও আঁকি কিন্তু সেখান থেকে আজ পর্যন্ত এক পয়সাও নিই নি। ওটা যদি নিতাম তবে তবে কয়েক হাজার কোটি রুপির মালিক হতে পারতাম। কিন্তু আমার তা প্রয়োজন পড়ে না। এটা আমার গর্ব। সেই কারণেই আমি নরেন্দ্র মোদিকে ভয় পাই না।’ 

এ সময় মমতার মন্তব্য, ‘...এরপরও নরেন্দ্র মোদি যখন বাংলায় এসে বলেন যে মমতা ব্যানার্জি সবচেয়ে টপ তোলাবাজ তখন শুনলে আমার মনে হয় তাকে ঠাসিয়ে ভাল করে একটা গণতন্ত্রের থাপ্পড় দিই।’ 

মমতার অভিমত, ‘রাজনীতি হচ্ছে সেবার জন্য, ব্যবসা করে খাওয়ার জন্য নয়। রাজনীতি যারা করবে মানুষের কাজ করার মানসিকতা নিয়ে তাদের আসা উচিত। রাজনীতি আর ইনকাম করে খাওয়া-দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে। যার যতটুকু প্রয়োজন-ঠিক ততটাই নেওয়ার উচিত। মাথায় ওপরে ছাদ, একটা টিভি বা দুই চাকা-চার চাকা গাড়ি থাকাটাও অন্যায় নয়। ডাল-ভাত বা মাছ-ভাত খাওয়াটাও অন্যায় নয়।’ 

এক শ্রেণির রাজনীতিবিদ যেভাবে রুপির পাহাড় তৈরি করছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা বলেন, ‘কাউকে কাউকে যখন দেখি কোটি কোটি রুপি সম্পত্তি করে এখানে-ওখানে রাখছে, সুদ পাচ্ছে-লোভ আর শেষ হয় না। তখন ভাবি যে এরা কি হীরে দিয়ে চড়চড়ি খাবে না মুক্তা দিয়ে মাছের ঝাল খাবে, না সোনা ভেজে খাবে।’ বিজেপির দিকে আঙুল তুলে তিনি বলেন, ‘বিজেপির লোকেদের কাছে রাজনীতির আদর্শ বলে কিছু নেই। ওরা গদা ও তলোয়ার নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। গদা নিয়ে লোকের মাথা ভাঙবে আর তলোয়ার নিয়ে গলা কাটবে-এই হচ্ছে রাজনীতি। আগে হাফপ্যান্ট পড়ে ঘুরে বেড়াতো কিন্তু এখন লাখ-কোটি রুপি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছে।’  

সাঁতুড়ির পর বাঁকুড়ার বরজোড়া ও রানিবাঁধে আরও দুইটি সভা করেন তিনি। ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান নিয়ে বিজেপিকে তোপ দেগে মমতা বলেন, ‘তোমরা মনে করো তুমি যাকে মান আমাকেও তাকে মানতে হবে-আমি তা মানবো না। আমি আমার বাংলার মাটিতে, ভারতের মাটিতে সব ধর্ম মানবো, সব গুরু, ঠাকুর, সংস্কৃতি মানবো কিন্তু বিজেপির স্লোগান মরে গেলেও আমার মুখ দিয়ে বেরোবে না-এটা মাথায় রেখে দেবেন। আমাদের স্লোগান জয় হিন্দ, বন্দে মাতরম, মা-মাটি-মানুষ জিন্দাবাদ। আমরা দুর্গাপূজা, কালীপূজা বা গণেশপূজাতেও আমরা ঠাকুরের নাম নিই। কিন্তু আপনারা তো দেবতাকে নিয়ে, ধর্মকে নিয়ে রাজনীতি করেন আর দাঙ্গা লাগান।’ 

নরেন্দ্র মোদিকে বসন্তের কোকিলের সাথে তুলনা টেনে মমতা বলেন, ‘এরা কখনও বাকুঁড়ায় আসেনি। নির্বাচনের সময় এসে বলবে ভোট দাও। বন্যা, নৌকোডুবি, মানুষ মারা গেছে তখন তারা আসেনি এখন বসন্তের কোকিল হয়ে কুহু কুহু করে ডাকছে আর বলছে আমায় ভোট দাও। ওই দাঙ্গাবাজ নরেন্দ্র মোদিকে একটা ভোটও দেবেন না। কারণ এরা যদি ক্ষমতায় আসে তবে দেশে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র থাকবে না, সংস্কৃতি থাকবে না।’ 

মমতার দাবি, ‘সারা ভারতে বিজেপি হারছে। আর বাংলায় আমরা একটা লাড্ডু দেবো। লাল মাটির রাস্তায় একটা কাঁকড় দেয়া লাড্ডু বানাবো। সেটা খাবে আর মিথ্যা কথা বলার জন্য দাঁত কড়মড় করে ভেঙে যাবে।’ 


বিডি-প্রতিদিন/০৭ মে, ২০১৯/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর