অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে এক ভেড়ার খামারের পেছনের উঠোনে প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ বছর পুরোনো কুমিরের ডিমের খোসা পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এগুলো সম্ভবত প্রাগৈতিহাসিক ধরনের কুমির ‘ড্রপ ক্রোক’-এর। তারা গাছে উঠে শিকার ধরত বলে ধারণা করা হয়।
এই আবিষ্কারটি সম্প্রতি জার্নাল অব ভার্টিব্রেট প্যালিয়োনটোলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই ডিমের খোসাগুলো ‘মেকোসুকাইন’ নামের এক বিলুপ্ত কুমির প্রজাতির। তারা অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে বাস করত। অস্ট্রেলিয়া তখন ছিল অ্যান্টার্কটিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার সঙ্গে যুক্ত এক মহাদেশের অংশ।
গবেষণার সহলেখক ও ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের জীবাশ্মবিজ্ঞানী প্রফেসর মাইকেল আর্চার বলেন, ড্রপ ক্রোক ধারণাটা অদ্ভুত শোনালেও, কিছু কুমির হয়তো চিতাবাঘের মতো গাছ থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে শিকার ধরত।
এই প্রজাতির কুমিরের দৈর্ঘ্য প্রায় পাঁচ মিটার পর্যন্ত হতো। তারা ৩৮ লাখ বছর আগের আধুনিক লবণপানির বা মিঠা পানির কুমিরের আগের যুগের বাসিন্দা ছিল।
ডিমের খোসাগুলো বহু দশক আগে পাওয়া গেলেও সম্প্রতি স্পেনের বিজ্ঞানীদের সহায়তায় বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আগের কিছু গবেষণায় পাওয়া যায়, প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ বছর আগেও মেকোসুকাইন কুমিররা বেঁচে ছিল এবং তাদের কিছু ছিল আধা-গাছে ওঠা বা আংশিক গাছে বসবাসকারী ‘ড্রপ ক্রোক’।
প্রফেসর আর্চার ১৯৮০-এর দশক থেকে কুইন্সল্যান্ডের মারগন এলাকায় গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ জায়গাটি এখন অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে পুরনো জীবাশ্ম আবিষ্কারের স্থানগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত।
গবেষক ড. মাইকেল স্টেইন জানান, এই প্রাচীন বনভূমিতেই পাওয়া গেছে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো গান গাওয়া পাখি, অস্ট্রেলিয়ার প্রথম দিকের ব্যাঙ ও সাপ, দক্ষিণ আমেরিকান বংশের ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বাদুড়ের জীবাশ্ম।
আর্চার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৮৩ সালে আমরা সেখানে গিয়ে স্থানীয় কৃষকের দরজায় কড়া নেড়ে বলেছিলাম—আমরা কি একটু খনন করতে পারি? তারা হাসিমুখে বলেছিল, ‘অবশ্যই।’ তারপর থেকেই একের পর এক অবাক করা আবিষ্কার আসছে, এবং আমরা জানি, এখনো অনেক রহস্য মাটির নিচে লুকিয়ে আছে।
এই আবিষ্কার শুধু প্রাচীন প্রাণিবিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত খুলেই দেয়নি, বরং লক্ষ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রাণজগৎ কতটা বৈচিত্র্যপূর্ণ ও চমকপ্রদ ছিল দেখিয়েছে। সূত্র : বিবিসি
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল