বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
কর্মকর্তা পর্যায়ের জনবলের মধ্যে ৪৪ জন ইন্টার্ন

ইন্টার্ন দিয়ে চলছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক

আলী রিয়াজ

ইন্টার্ন দিয়ে চলছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক

ইন্টার্ন অফিসার দিয়ে চলছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। সারা দেশে ব্যাংকের ৪৯টি শাখা ও দুটি বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় বুথে ইন্টার্ন অফিসার নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকার ঘুষ-বাণিজ্য হয়েছে। এখন পাঁয়তারা চলছে এই ইন্টার্ন অফিসারদের স্থায়ী নিয়োগ দেওয়ার। অনেক শাখায় একজন কর্মকর্তা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এর মধ্যে একটি শাখা চলছে একজন পিয়ন দিয়ে! তিনিই ব্যাংকের ঋণ প্রদান ও আদায় করেন। ব্যাংকের অফিস সহায়ক, ড্রাইভার, ক্লিনারও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী ভিত্তিতে। অভিযোগ রয়েছে, তাদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। বিদেশগামী প্রবাসীদের ঋণ দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটি নানা সংকটে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকটির সারা দেশে শাখা রয়েছে ৪৯টি। পর্যাপ্ত লোকবল না থাকলেও ইন্টার্ন নিয়োগ দিয়ে সারা দেশে এই শাখাগুলো খোলা হয়। ব্যাংকের মোট ১২১ জনের কর্মকর্তা পর্যায়ের জনবলের মধ্যে ৪৪ জন ইন্টার্ন অফিসার। বর্তমানে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা পর্যায়ের ৩৪ জনের মধ্যে সাতজনই ইন্টার্ন অফিসার। এ ছাড়া ৩১ জন কর্মচারীর মধ্যে ১৬ জন অস্থায়ী নিয়োগ পাওয়া। প্রধান শাখায় মোট কর্মকর্তা রয়েছেন ২২ জন। এর মধ্যে সাতজনই ইন্টার্ন অফিসার। প্রধান শাখার ব্যবস্থাপক মোহম্মদ আবু সাঈদ কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে প্রেষণে নিয়োগ পেয়েছেন।

তাকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তিনবার নিজ কর্মস্থলে চলে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেও তিনি যোগাযোগ করে ওই পদে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনিই সব ইন্টার্ন নিয়োগ, অস্থায়ী নিয়োগ ও ঋণ সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বেশির ভাগ শাখা একজন, দুজন ইন্টার্ন অফিসার দিয়ে চলছে। রাজধানীর কাকরাইল, বরিশাল, রংপুর, দিনাজপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিলেট, যশোর ও খুলনা শাখায় গড়ে চারজন করে লোকবল রয়েছে। এর মধ্যে সব শাখায় দুজন করে ইন্টার্ন রয়েছে। এক বছর ধরে ব্যাংকের সদ্বীপ শাখা চলছে মো. ফেরদৌস নামে একজন অফিস সহায়কের (পিয়ন) নেতৃত্বে। শাখার দায়িত্বে ছিলেন শহীদুল ইসলাম নামে এক সিনিয়র অফিসার, যিনি এক বছর আগে চাকরি নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

অন্যদিকে পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, নওগাঁ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, কক্সবাজার, হাটহাজারী, রাঙামাটি, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সিঙ্গাইর, কিশোরগঞ্জ, ফেনী, নরসিংদী, পাবনা, মির্জাপুর, দোহার, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুড়িগ্রাম ও কুষ্টিয়া শাখায় মোট জনবল একজন করে, যাদের অধিকাংশই ইন্টার্ন কর্মকর্তা।

এই ইন্টার্ন কর্মকর্তাই ব্যবস্থাপক, অফিসার, পিয়ন। তিনি ঋণ প্রদান, আদায়, মাসিক প্রতিবেদন তৈরি করেন।  কখন অফিসে আসেন, কখন চলে যান কেউ বলতে পারে না। ইস্কাটনে প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে কথা বললে কক্সবাজারের এক গ্রাহক শাহিনুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কখন খোলে তা জানি না। তাই ঢাকায় এসে আবেদন করছি।’ ঢাকায় আবেদন কীভাবে করবেন, প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এখান থেকে আবেদন করা যায়।’

২০১১ সালে বিদেশগামী শ্রমিকদের ঋণ-সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। প্রতিষ্ঠার পর ১২১ জন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ, এক্সিকিউটিভ ও জুনিয়র এক্সিকিউটিভ (ক্যাশ) অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়। পর্যাপ্ত লোকবল নিয়ে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি শাখা খোলা হয়। এরপরই সারা দেশে শাখা খোলার পরিকল্পনা করেন ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সি এম কয়েস সামি, যিনি ওরিয়েন্টাল ব্যাংক লোপাট করার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সে সময় তিনি ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। এখন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য তদবির করছেন। তবে তার অপকর্মের সহযোগিতা বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকও করে যাচ্ছেন।  ইন্টার্ন অফিসারদের স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

 

সর্বশেষ খবর