বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা
পাঁচ হাজার কোটি টাকা খেলাপি

ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনা

আলী রিয়াজ

ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনা

দুই মাসের মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমডিদের ডেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।  সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স বৈঠকেও সরকারি ব্যাংকের খেলাপি নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. নওশাদ আলী চৌধুরী বলেন, যাদের ঋণ দেওয়া হয়েছে তাদের বাছাইয়ে সমস্যা ছিল। ফলে এখন আদায়েও কিছু সমস্যা আছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে রিকভারি করা যায়। সব ব্যাংকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলা করে আদায় করাও সময়ের ব্যাপার। এখন ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সতর্কভাবে যাচাই-বাছাই করে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে অবলোপন, অনিয়মিত ক্ষুদ্র ও এসএমই ঋণ মিলে তার পরিমাণ আরও প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের ভারে অস্তিত্ব সংকটে ব্যাংকগুলোকে প্রতি বছর বাজেট থেকে মূলধন সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্টরা এর বিরোধিতা করে বলছে, মূলধন এনে আবার মন্দ প্রকল্পে ঋণ দিলে খেলাপির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এতে ব্যাংকের কোনোই উন্নতি হবে না।

সোনালী ব্যাংক : চার ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ব্যাংকটি সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার খেলাপি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে নেমে মে পর্যন্ত আদায় করেছে মাত্র ২১১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছে দুই মাসের মধ্যে কমপক্ষে তিন হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যাংকটি দেশব্যাপী ক্ষুদ্র ঋণ আদায়ে জোর দিলেও শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে কোনো অর্থ আদায় করতে পারেনি। চলতি বছর শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে ৪০০ কোটি টাকা আদায় করতে নেমে মাত্র ৪ কোটি আদায় করেছে।

রূপালী ব্যাংক : শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ে দেশব্যাপী বিশেষ আদায় অভিযানে নেমেছে রূপালী ব্যাংক। আগামী দুই মাসে ৪০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে খেলাপিদের বিরুদ্ধে এই অভিযান। ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণ থেকে নগদ আদায় হবে ১৭০ কোটি টাকা। অবলোপনকৃত ঋণ থেকে ৩০ কোটি টাকা এবং অ-শ্রেণিকৃত ঋণ থেকে নগদ ২০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে। ২০১৪ সালে রূপালী ব্যাংক শ্রেণিকৃত ঋণ থেকে ১০৩ কোটি টাকা আদায় করেছে। ২০১৫ সালে আদায় হয়েছিল ১১২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে শ্রেণিকৃত ঋণের পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে পর্যন্ত)  আদায় হয়েছে ১৪৫ কোটি টাকা। ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ দুই হাজার ৮৫ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফরিদ উদ্দিন বলেন, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড দারুণভাবে ব্যাহত করছে। শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ যতই বাড়ছে, মুনাফা অর্জনের পথ ততই সঙ্কুচিত হচ্ছে। ব্যাংকের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে খেলাপি ঋণ আদায়ের কোনো বিকল্প নেই। তাই ব্যাংকের সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ অভিযান চলছে।

অগ্রণী ব্যাংক : এ ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। দুই মাসের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা খেলাপি আদায়ের জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অগ্রণী ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ২১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকার ঋণের ১৮ শতাংশই খেলাপি। খেলাপি ও অবলুপ্ত করা ঋণ মিলিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের মোট খেলাপির পরিমাণ ৯ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা।

জনতা ব্যাংক : এ প্রতিষ্ঠানটি কয়েক বছর মুনাফা করলেও খেলাপি পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারেনি। পাশাপাশি খেলাপির পরিমাণ আশঙ্কাজনক। মোট ৩১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে মে মাস পর্যন্ত খেলাপির পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। তাদের ঋণের প্রায় ১০ শতাংশই খেলাপি। মুনাফা করার পরও গত বছর ব্যাংকটি বাজেট বরাদ্দ থেকে মূলধন সংগ্রহ করেছে। দুই মাসের মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর