মঙ্গলবার, ১৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু ছিলেন তরুণ বাংলার সুভাষ বসু

আবুল হাসান চৌধুরী

বঙ্গবন্ধু ছিলেন তরুণ বাংলার সুভাষ বসু

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু প্রত্যেক প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ থাকবেন। বঙ্গবন্ধুর একজন তরুণ কর্মী হিসেবে তাঁর সঙ্গে থেকে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। আমি মনে করি, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। পৃথিবীর অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বিখ্যাত বক্তব্য দিয়েছেন। তবে বঙ্গবন্ধুকে একসঙ্গে অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়েছে। তাঁকে চিন্তা করতে হয়েছে আগ্নেয়গিরির মতো। তাঁর চিন্তা করতে হয়েছে তখনকার তরুণ নেতাদের চাপ। তাঁর চিন্তা করতে হয়েছে কিছু মানুষের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা। এসব কিছুকে সমন্বয় করে তিনি ১৮ মিনিটের যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেটা এখন পৃথিবীর অনন্য স্বীকৃত ভাষণ। ইউনেস্কো এই ভাষণকে বিশেষ স্বীকৃতি দিয়েছে।

আমি আহ্বান করব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাফট ইউনিভার্সিটির বিখ্যাত থ্রেচার স্কুল অব  ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হোক। এই ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়ে সেখানে আলোচনা হওয়া উচিত। যখন আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ আরম্ভ হয়, তখন অন্য কোনো নেতা, অন্য কোনো ব্যক্তির নাম আমরা শুনিনি। বাঙালির প্রতিরোধের প্রতীক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি ছিলেন একজন প্রত্যয়দৃপ্ত ব্যক্তি। বঙ্গবন্ধু একা বড় হননি। সমগ্র বাংলাদেশকে বড় করেছিলেন।

আমি আমার এক নিকটাত্মীয়কে জিজ্ঞেস করেছিলাম- আপনার সময়, আপনি তো কবি কাজী নজরুল ইসলামকে দেখেননি। তিনি বললেন, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। বঙ্গবন্ধুকে দেখার চেষ্টা কর। মহব্বত ধরা পড়ুক। তিনি প্রত্যয়দৃপ্ত একজন ব্যক্তিত্ব। অর্থাৎ সব সময় একটা হাস্যোজ্জ্বল মানুষ।

শ্রদ্ধেয় রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু ভাইদের সহকর্মী সৈয়দ জালাল উদ্দিন হাশমী। সাধারণত নিখিল বঙ্গ ছাত্রলীগ মুসলিম লীগকে অনুসরণ করতেন। কিন্তু হরলেল মনুমেনকে বিতাড়িত করতে ১৯৪০ সালে বাংলার তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ আরও কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা সেই ইস্যুতে কংগ্রেসের নেতা নেতাজি সুভাষ বসুর আহ্বানে রাস্তায় নামবেন। কিছুটা কৌশলগত কারণে শেরেবাংলা বলেছিলেন, আমাকে একটু সময় দাও। আমি এই মুহূর্তে হরলেল মনুমেনকে বিতাড়িত করতে পারব না। কারণ, তাতে সরকার ব্যর্থ হওয়ার একটা ঝুঁকি থাকবে। কিন্তু সেই নেতৃত্ব এ কথা মানেনি।

এই হরলেল মনুমেনকে কলকাতার বুক থেকে সরিয়ে দিতে ইসলামী ইসলামিয়া কলেজে দেওয়া নেতৃত্বগুণে মুগ্ধ তখনকার কলকাতার মানুষ আদর করে বলতেনÑ শেখ মুজিব তরুণ বাংলার সুভাষ বোস।

বঙ্গবন্ধুর অনেক বক্তব্য আছে। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি। এটাকে স্বাভাবিক মনে হয়েছে। একজন নেতা মানুষের বুকের হৃদয়ের কত কাছাকাছি এলে বলতে পারেন, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি। এই কথা মহব্বতের নির্যাস। একটা শক্তি। এই শক্তি আমরা দেখেছিলাম। 

বঙ্গবন্ধু সিংহের মতো গর্জন দিয়ে শুধু নিজের না, সমগ্র দেশকে এগিয়ে নিতে চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে বুঝতে হলে লাঞ্ছিত-বঞ্চিত মানুষের কথা বুঝতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে বুঝতে হলে বাংলার ইতিহাস বুঝতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে বুঝতে হলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি নজরুল ইসলাম, আমাদের জারি-সারি ও ভাটিয়ালি গান বুঝতে হবে।

বঙ্গবন্ধু তার গলব্লাটার অপারেশন করার আগে আমরা যখন দেখা করতে গেলাম, তিনি তখন বললেন, আমি কখনো মৃত্যুকে ভয় পাই না। মৃত্যুকে যারা বুক পেতে নেয়, তারাই বাঁচতে জানে। চিরজীবন এটাই বিশ্বাস করেছি। কিন্তু এখন তো বাঁচতে ইচ্ছে করে। কারণ, বাঙালিকে ভালোবেসে ফেলেছি।

একদল বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ এই মহান বাঙালি, আমাদের জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। সবচেয়ে দুঃখ হয়, এই অপরাধবোধ আমাদের চিরদিন বহন করতে হবে। যে লোক এভাবে বাঙালিকে ভালোবেসেছে। সেই বাঙালির হাতেই এভাবে বঙ্গবন্ধুকে নিহত হতে হয়েছে। দেশ স্বাধীনের মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে তাঁর নির্মম হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। তিনি যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আজ পালন করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে নির্দেশনা রেখে গেছেন তারই বাস্তবায়ন করছেন প্রধানমন্ত্রী। এই যে অদমনীয় আত্মবিশ্বাস। এই আত্মবিশ্বাস বাঙালির ভিতর চির অম্লান থাকুক। বাংলার নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। আরও উন্নয়নের জোয়ারকে চিরন্তন করতে পারব। অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যেতে পারব।

লেখক : সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

শ্রুতিলিখন : রুহুল আমিন রাসেল

সর্বশেষ খবর