মঙ্গলবার, ১৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

নেতৃত্বে দেখতে পাই নেতাজি সুভাষ বসুর ছায়া

লে. কর্নেল জাফর ইমাম (অব.) বীরবিক্রম

নেতৃত্বে দেখতে পাই নেতাজি সুভাষ বসুর ছায়া

দীর্ঘ আন্দোলনের চড়াই-উতরাই পার হয়ে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবের একক নেতৃত্বে আমরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখন্ড পেয়েছিলাম...

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে জাতির অসীম শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার পাশাপাশি শপথ নিতে হবে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা থাকব দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ও আপসহীন। ক্ষণজন্মা এই মহান নেতার জন্ম ছিল বাঙালি জাতির জন্য বিধাতার এক আশীর্বাদস্বরূপ। পরবর্তীতে দীর্ঘ আন্দোলনের চড়াই-উৎরাই পার হয়ে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবের একক নেতৃত্বে আমরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখ- পেয়েছিলাম। ব্রিটিশ আমল থেকে নিয়ে দীর্ঘ সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই এই লক্ষ্য অর্জনে তাঁর আপসহীন ভূমিকা। তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের সঙ্গে নেতা সুভাষ চন্দ্র বসুর অনেক মিল রয়েছে। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু দেশের স্বাধীনতার জন্য যখন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় গ্রেফতার হয়ে নির্যাতনের শিকার হন তখন তাঁর মুক্তির দাবিতে রাজপথ ছিল উত্তপ্ত স্লোগান ছিল জ্বালাও জ্বালাও আগুন জ্বালাও। দূরদর্শী নেতা সুভাষ চন্দ্র বসু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন- এই দেশ এক দিন স্বাধীন হবে। কেউ আর দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু হঠাৎ করে নেতা হননি। বঙ্গবন্ধুর মধ্যে আমরা দেখতে পাই নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মতো নেতৃত্বে দৃঢ়সংকল্প ও চারিত্রিক গুণাবলির ছাপ। ব্রিটিশ ভারতে সেই দিন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের সান্নিধ্যে আপসহীন ছাত্রনেতা হিসেবে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছিল। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির আগ মুহূর্তে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় বঙ্গবন্ধু বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই সময় তাঁর অসাম্প্রদায়িক নেতৃত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে তিনি বারবার কারাবরণ করেছেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাবরণের সময় জনগণের উত্তাল আন্দোলনের মুখে পাক সরকার তাঁকে কারামুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। তাঁর নেতৃত্বে স্বাধিকার আন্দোলন আরও তীব্রতা ধারণ করে। দল-মত নির্বিশেষে পুরো জাতি তাঁর নেতৃত্বে স্বপ্ন দেখেছিল শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন একটি দেশ। এই অভ্যুত্থানের সময়কালে জাতি তাঁকে বঙ্গবন্ধু খেতাবে ভূষিত করে। নেতাজির মতো এই কারা নির্যাতনের সময় এবং পরবর্তীতে যুদ্ধের সময় তিনি দীর্ঘদিন কারাবরণ ও কারা নির্যাতন ভোগ করেছিলেন। কিন্তু কোনো অবস্থায় ও পরিস্থিতিতে বাংলার মাটি এবং মানুষের স্বার্থে আপস করেননি। নেতাজির মতো এই কারা নির্যাতনের সময় এবং পরবর্তীতে আন্দোলনের এই উত্তাল তরঙ্গ দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, এই দেশ এক দিন স্বাধীন হবে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। তাই তো তিনি ছিলেন যুদ্ধ ও সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী মহানায়ক।

দীর্ঘ সংগ্রাম ও যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সংগ্রাম ও যুদ্ধ যেন একই মালার দুটি ফুল। অনেকে বলেন, যুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন, তিনি তো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি, এই অবুঝ ও ইতিহাসবিমুখদের উদ্দেশে আমি বলতে চাই, পুরো স্বাধীনতা যুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর নামের ওপর হয়েছিল। তাই তো আমরা এই যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলাম ও তাঁর স্বপ্নের এই বাংলাদেশ পেয়েছিলাম। এই যুক্তির বিপরীত মূল্যায়নে আমি বলব, স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অধীনে যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল তার নেতৃত্বে তিনিই ছিলেন। কারণ এই স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি এবং তাঁর জায়গায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন। পাকিস্তান কারাগারে বন্দী শেখ মুজিবকে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি যদি না দেখানো হতো তাহলে কি হতো?

ক) এই যুদ্ধের পক্ষে ও পাকিস্তানিদের গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি হতো না।

খ) ভারত সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা যেমন যুদ্ধ (শরণার্থীদের আশ্রয়, অস্ত্র সরবরাহ, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণসহ) যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবিলায় তাদের প্রস্তুতি সর্বোপরি ভারতের সার্বিক সহযোগিতার এই যুদ্ধে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি ও তৎপরতার বিরাট ঘাটতি দেখা দিত।

গ) শেখ মুজিবের হিমালয় সমান বিশালতা ও নেতৃত্বে দৃঢ়তা জানার জন্য আরেকটি বিপরীত মূল্যায়ন আমাদের জানা উচিত। ২৫ মার্চ রাতে পাক হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে যদি হত্যা করার সাহস করত তাহলে আমাদের  স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল অনিশ্চিত। 

ঘ) বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ইন্দিরা গান্ধীকে ভারতের সেনাবাহিনী (বাংলাদেশে অবস্থানরত) ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করলে তাৎক্ষণিক ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে আশ্বস্ত করেন এবং ফিরিয়ে নেন। যদি বঙ্গবন্ধু ফিরে না আসতেন তাহলে ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ফিরে যেত না, সেক্ষেত্রে দেশের ভবিষ্যৎ হতো অনিশ্চিত।

তাই ওই উপরের মূল্যায়নে দেখা যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর নামের ওপরে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি ও ভারতের সহযোগিতা ত্বরান্বিত হয়েছিল এবং আমরা মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গনে ধারণ ও লালন করেছিলাম তার স্বপ্ন এই মুক্ত বাংলাদেশ। অনেকে মনে করেন, শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ মার্চে বন্দী না হয়ে পালিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা ভালো ছিল। এতে পরিস্থিতি কী আকার ধারণ করত তার একটা বিশ্লেষণের প্রয়োজন।

প্রথমত, বঙ্গবন্ধু পালিয়ে গেলে বিশ্বদরবারে তাঁর ভাবমূর্তি খাটো হয়ে যেত। পাকিস্তান তখন বহির্বিশ্বে প্রচার করত শেখ মুজিব পলাতক। পাকিস্তান সরকার তাঁকে বিচ্ছিন্ন ও রাষ্ট্রদ্রোহী বলে আখ্যা দিত এবং আরও বলত আত্মগোপনে থেকে তাঁর নেতৃত্বে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পাকিস্তানকে ধ্বংস করার জন্য সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে সহিংসতা চালাচ্ছে। পাকিস্তান সরকার এ বিদ্রোহ দমনে আর নীরব থাকতে পারে না।

দ্বিতীয়ত, এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সরকার বহির্বিশ্বের কাছে আরও দাবি করত, পলাতক বঙ্গবন্ধুকে খুঁজে বের করার অজুহাতে তাদের সামরিক অভিযান শুধু জোরদার করত না, পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো বিমান থেকে ভারী গোলাবর্ষণের মাধ্যমে গুঁড়িয়ে দিত।  এ অবস্থায় বাংলাদেশ হতো এক মৃত্যু উপত্যকা।

তৃতীয়ত, বঙ্গবন্ধু যদি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতেন তাহলে পাকিস্তান বিশ্ববাসীর কাছে বঙ্গবন্ধুর আশ্রয় নেওয়ার জন্য ভারতকে  অভিযুক্ত করত।

তখন ভারতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রবাসী  সরকার গঠনসহ আমাদের নতুন করে যুদ্ধ প্রস্তুতির বিরুদ্ধে পাকিস্তান, আমেরিকা ও ইসলামী রাষ্ট্রগুলো সোচ্চার হতো। বঙ্গবন্ধু নিজে সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়নে বিশ্ব গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে বাধ্য হতেন। এতে বিশ্বজনমতের মধ্যেও এক ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান হতো। বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে নিজেদের মধ্যে নানা বিষয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব জটিল আকার ধারণ করার আশঙ্কা ছিল। এতে ভারতের সহযোগিতার মাত্রা সীমিত আকার ধারণ করত এবং আমাদেরও সার্বিক প্রস্তুতির ঘাটতি দেখা দিত। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর ভারতে বসে অথবা বিদেশ থেকে যুদ্ধ পরিচালনার পাশাপাশি বর্বরতা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত সৃষ্টি করা খুব কঠিন হতো। আমরা দেখেছি, বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে এই বিশাল দায়িত্বটি পালন করছিল ভারত সরকার। তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা আমাদের মধ্যকার অন্তঃকোন্দল ও বিশ্বের কয়েকটি দেশের বিরোধিতাকে পাশ কাটিয়ে আমাদের পক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টি করে। বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে পরিস্থিতি ভিন্নরূপ নিত। বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির তুলনামূলক বিচারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ভিন্ন থাকত। পরিস্থিতি মূল্যায়নে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে নয় মাসের যুদ্ধে লক্ষ্য অর্জনে আমাদের পক্ষের পাল্লা ছিল ভারী। এজন্য যে, পুরো যুদ্ধই চলছিল বঙ্গবন্ধুর নামের ওপরে। তিনি পাকিস্তান কারাগারে বন্দী থাকায় ভারত ও বিশ্বের সমর্থনে আমাদের যুদ্ধের গতি দিন দিন যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছিল একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবিও জোরদার হচ্ছিল। সেই দিনগুলোয় ভারত আমাদের এই যুদ্ধের সহযোগিতার পাশাপাশি শেখ মুজিবের মুক্তির সহায়তার জন্য পুরো বিশ্ববাসীর কাছে আহ্বান জানিয়ে শুধু ক্ষান্ত হয়নি, তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বে এই মুক্তির দাবিকে জোরদার করার জন্য ২৬টির অধিক দেশ সফর করেন।

’৭১-এর পুরো মার্চ মাসে একদিকে রাজপথ ছিল উত্তপ্ত অন্যদিকে শেখ মুজিবকে ক্ষমতা হস্তান্তরের অজুহাতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চলছিল ঘন ঘন বৈঠক, সংসদ অধিবেশনের আহ্বানও বাতিল। সর্বোপরি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সময় ক্ষেপণসহ করছে প্রতারণার নাটক। বিচক্ষণ বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন এরা কোনো দিন ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না, করতে পারে না। বঙ্গবন্ধু জানতেন তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও ফন্টিয়ার প্রদেশগুলো পাঞ্জাবি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্য ও নির্যাতনের কারণে তাদের থেকে পৃথক হওয়ার আন্দোলন করছিল, এরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নির্যাতিত বাঙালির পক্ষে আছেন। তাই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বুঝতে পারল বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলে পুরো পাকিস্তান টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুর চতুরতা, বিশ্বমানের নেতাসুলভ আচরণ ও সার্বিক দূরদর্শিতার কাছে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পরাজিত হলো, তাদের ব্যবহার ছিল শিশুসুলভ, উন্মাদের মতো। ৭ মার্চের ভাষণের আগমুহূর্তে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড সকালে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে দেখা করে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যেন স্বাধীনতার ঘোষণা না দেন। এদিন সকালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি মেজর জেনারেল খাদেম হোসেন রাজা বঙ্গবন্ধুকে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিলেন এই বলে, যদি আজ রেসকোর্স ময়দানে কোনো স্বাধীনতার ঘোষণা আসে তাহলে আমরা পুরো রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বোমা মেরে ধ্বংস করে দেব। অথচ স্বাধীনতার অনেক দিন পরে জেনারেল খাদেম হোসেন রাজা তার এক সাক্ষাৎকারে ৭ মার্চের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা সেদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সেনানিবাসগুলোয় ভয়ভীতিতে কাঁপছিলাম। এ অবস্থায় যে কোনো মুহূর্তে উত্তপ্ত লাখ লাখ মানুষ মুজিবের নির্দেশে যদি সেনানিবাসগুলো আক্রমণ করে তাহলে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় সৃষ্টি হতো এক ভয়াবহ করুণ চিত্র।’ বিচক্ষণ বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং পুরো জাতিকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে গড়ে তুলেছিলেন। তাই তো ৭ মার্চের ভাষণের পরপর ঢাকা সেনানিবাস থেকে যে রিপোর্ট রাওয়ালপিন্ডিতে পাঠানো হয়েছিল তাতে উল্লেখ ছিল, কৌশলে শেখ মুজিবুর আসলে স্বাধীনতার ঘোষণাই দিয়েছিলেন।

২৫ মার্চ রাতে পুরো ঢাকা থমথম অবস্থায় ছিল। বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এদিকে সেনাবাহিনীর তিন কমান্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জহির আলম খানের নেতৃত্বে একটি সেনাদল শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং তার বাড়ির ওপর গুলি ছুড়তে থাকলে তিনি এই প্রচ- গোলাগুলির মধ্যে পড়ে বাড়ির বেলকনিতে এসে বলিষ্ঠ কণ্ঠে বললেন, ‘গুলি ছোড়ার দরকার নেই আমি প্রস্তুত আছি।’ পাকিস্তান সেনাবাহিনী শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

এখানেই আমরা মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রাম ও যুদ্ধে সঠিক নেতৃত্ব এবং আপসহীন ভূমিকাকে মূল্যায়ন ও উপলব্ধি করতে পারি। বাংলাদেশ অর্জনে তাঁর বিশাল অবদান। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যদি যুগ যুগ ধরে বঙ্গবন্ধুর এ অবদান, এ ইতিহাসকে ধারণ ও লালন করে তাহলেই আমরা অর্জিত এ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখতে পারব। স্বাধীনতাবিরোধী প্রেতাত্মার কালো ছায়ামুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার হোক আজ সবার অভীষ্ট লক্ষ্য।

লেখক : মুক্তিযুদ্ধের সাব-সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর