১৪ জানুয়ারি, ২০২১ ২১:২১

শেরপুর পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

শেরপুর পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

ফাইল ছবি

ভোটের বাকি একদিন। তাই বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এরইমধ্যে বগুড়ার শেরপুর পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভোটের মাঠ। একদিকে যেমন নির্বাচন জমে উঠেছে, অন্যদিকে সহিংসতাও বাড়ছে।

বিগত এক সপ্তাহের মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী মিছিলে হামলা-মারধর, কার্যালয় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কার্যালয় ভাঙচুর ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক কাউন্সিলর প্রার্থীর কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এসব ঘটনার মধ্যে কেবল দুইটি ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া একটি ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার অভিযুক্তরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেড়িয়ে এসেছেন। কিন্তু অন্যান্য ঘটনার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। এমনকি জড়িতদের চিহিৃত কিংবা কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

এই অবস্থায় প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী, তাদের কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। সেইসঙ্গে ভোটের দিন এই এলাকার পরিবেশ কেমন থাকবে, নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়া যাবে কি-না এমন শঙ্কাও করছেন তারা। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে-সেই শঙ্কা আরও বাড়ছে।

১৬ জানুয়ারি শনিবার দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিতব্য বগুড়ার শেরপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মোট চারজন, কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান পৌর মেয়র আব্দুস সাত্তার, বিএনপির দলীয় ধানের শীষের প্রার্থী স্বাধীন কুমার কুন্ডা, বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী জগ প্রতীক নিয়ে জানে আলম খোকা ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী ইমরান কামাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদিকে, সাধারণ ভোটাররা জানান, এই নির্বাচনে ত্রি-মুখী লড়াই হবে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র প্রার্থী।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, বিগত ১৮৭৬ সালের ১ এপ্রিল ১০ দশমিক ৩৯৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত এই শেরপুর পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ হাজার ৭৫৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৪১৫ জন ও নারী ভোটার সংখ্যা ১২ হাজার ৩৩৯ জন। ৯টি ওয়ার্ডে মোট ১১টি ভোট কেন্দ্রে ব্যালটের মাধ্যমে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছেই।

পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মাসের ৪ জানুয়ারি দিনগত রাত আনুমানিক সোয়া দশটার দিকে পৌরশহরের দ্বাড়কিপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আব্দুস সাত্তারের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বেশ কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মী নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। এসময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।

এতে আওয়ামী লীগের দশজন নেতাকর্মী আহত হন। গুরুতর তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনায় পরদিন ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ কর্মী হযরত আলী বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করাসহ আরও অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে দুইদিন পরেই এই মামলায় এজাহার নামীয় অভিযুক্তরা আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন নিয়েছেন।

এই ঘটনার দুইদিন আগে ২ জানুয়ারি শেরপুর শহরের খন্দকারপাড়া এলাকায় বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী জানে আলম খোকার জগ মার্কার নির্বাচনী প্রচারণার কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের দায়ী করা হলেও থানায় মামলা দায়ের করা হয়নি।

এদিকে, গত ৯ জানুয়ারি ভোররাতে একযোগে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত মেয়র প্রার্থীর নৌকা মার্কার নির্বাচনী প্রচারণার চারটি কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এতে অফিসের বেশ কয়েকটি চেয়ার টেবিল, কাপড় ও নৌকা প্রতীক সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানার ও অসংখ্য পোস্টার পুড়ে গেছে। এই ঘটনার দুইদিন পর ১১ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আম্বীয়া বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।

তবে এই মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা না হলেও অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। সর্বশেষ বুধবার পৌরশহরের শ্রীরামপুরপাড়াস্থ আওয়ামী লীগের সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী বিপ্লব কুমার দত্তের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। সেইসঙ্গে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আছিয়া খাতুন জানান, শেরপুর পৌরসভা নির্বাচনে মোট এগারোটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে ৯টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বা অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহিৃত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে। বাকি দুইটি সাধারণ ভোট কেন্দ্র। সবমিলিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকায় ভোটের পরিবেশ মোটামুটি ভালোই রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

বগুড়ার শেরপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া ভোটের মাঠে সবাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। অবাধ-সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসন বদ্ধপরিকর। সে লক্ষ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছেন। তাই এই পৌরসভার অতি গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে পাঁচজন পুলিশ সদস্যসহ ১৩ জন ও সাধারণ ভোটকেন্দ্রে তিনজন পুলিশসহ ১১ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবেন বলে জানান তিনি।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর