রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

উৎসব জমে ওঠে আশির দশকে

উৎসব জমে ওঠে আশির দশকে

গ্রাম-বাংলার সার্বজনীন উৎসব পয়লা বৈশাখ। সময়ের পালাবদলে নগরজীবনে পয়লা বৈশাখ উৎসব আয়োজনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আশির দশকের আন্দোলন, মঙ্গল শোভাযাত্রার শুরু- তারপরই নতুন আঙ্গিকে, নতুন উচ্ছ্বাসে বৈশাখী উৎসব জমে ওঠে। গ্রাম-বাংলার জীবনের প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। শহুরে জীবনে পয়লা বৈশাখের আনন্দ আয়োজনে বহু সংযোজন, বিয়োজন ঘটেছে। বাংলার ইতিহাস নতুন করে লেখা মুক্তিযুদ্ধের পর। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাংস্কৃতিক মুক্তির আন্দোলনে মানুষ দলে দলে যোগ দিতে শুরু করে। বাংলার মহান নেতা এ কে ফজলুল হক বাংলার মানুষকে যে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি সংগ্রামের পথ দেখিয়েছিলেন সে পথেই পয়লা বৈশাখে বাংলার মানুষ একসঙ্গে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে। ছায়ানট বহু আগে পয়লা বৈশাখ পালনে উৎসব আয়োজন করলেও এখন আমরা যে ধরনের উৎসব দেখি তার জনপ্রিয়তা আশির দশকে। পান্তা-ইলিশের চলটাও একেবারে নতুন। এসবের সঙ্গে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যমাখা পয়লা বৈশাখের কোনো সম্পর্কই নেই।

পয়লা বৈশাখ বলতেই একসময় ছিল বটতলায় বৈশাখী মেলা। নাগরদোলা, মিষ্টি-মণ্ডা, গ্রামীণ নারীর চুড়ি-আলতা, ঢাক-ঢোলে লোক সংগীত।

১৯৮৯ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রার শুরু। ছায়ানটের বটতলায় বর্ষবরণের সংগীত আয়োজনের ইতিহাস পুরনো হলেও আশির দশকের পর পয়লা বৈশাখের চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। তাই বলে পয়লা বৈশাখের আবেদন বদলে গেছে- এমনটা ভাবা ভুল হবে। গ্রাম-বাংলার চিরায়ত গ্রামীণ উৎসবের অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনায় পয়লা বৈশাখ বাংলাদেশের মানুষকে সব সময়ই আলোড়িত করে একই আবেদনে, গুরুত্বে ও আবেগে। আনন্দঘন পরিবেশে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে সবাই মুখিয়ে থাকে এদিনটির জন্য। অসাম্প্রদায়িক, সার্বজনীন উৎসব বলে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ছুটে আসে রমনা বটমূলে, মঙ্গল শোভাযাত্রায়। নতুন সূর্যস্নানে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় শহরের মানুষ। ঐতিহ্যবাহী বাঙালি পোশাক পরে, রবীন্দ্র-নজরুলের গানে, সুরে মেতে ওঠে সবাই।

ছায়ানটের উদ্যোগে জনাকীর্ণ রমনার বটমূলে রবীন্দ্রনাথের আগমনী গান ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’-এর মাধ্যমে নতুন বর্ষকে বরণ করা হয়। তরুণীরা লালপেড়ে সাদা শাড়ি, হাতে চুড়ি, খোঁপায় ফুল, গলায় ফুলের মালা এবং কপালে টিপ পরে; আর ছেলেরা পরে পাজামা ও পাঞ্জাবি। এখনো বৈশাখী মেলায় মানুষের ভিড় জমে। বাচ্চারা কেনে খেলনা। মিষ্টি-মণ্ডায় মুখরোচে। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের নিমন্ত্রণ জানানো হয়। পিঠা, পায়েস ও নানা রকম লোকজ খাবার দিয়ে আপ্যায়নের রীতি এখনো মেনে চলে অনেকে। মহল্লায় মহল্লায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, বর্ণাঢ্য মিছিল, বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়।

বাংলা নববর্ষ ও চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে তিন পার্বত্য জেলায় উপজাতীয়দের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয়, সামাজিক উৎসব ‘বৈসাবি’ আনন্দমুখর পরিবেশে পালিত হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর