২৯ অক্টোবর, ২০২০ ১১:৩১

বস্তা ক্রয়ে কেলেঙ্কারি, কুড়িগ্রামে একযোগে ১৪ কর্মকর্তা-কর্মচারি বদলি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

বস্তা ক্রয়ে কেলেঙ্কারি, কুড়িগ্রামে একযোগে ১৪ কর্মকর্তা-কর্মচারি বদলি

কুড়িগ্রামের খাদ্য বিভাগের ধান, চাল ও গমের বস্তা ক্রয়ে কেলেঙ্কারির অভিযোগে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে ১৪ কর্মকর্তা কর্মচারিকে। তবে যারা অভিযুক্ত কিংবা এ ঘটনায় জড়িত নন তাদের মধ্যেও কাউকে বদলি করায় অনেকের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য বিভাগে ছেড়া, ফাঁটা ও নিম্ন মানের প্রায় ৮ লাখ বস্তা ক্রয়ের দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একযোগে ১৪ জন কর্মকর্তা কর্মচারিকে এ শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। তম্মধ্যে ৩ জন ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা (ওসি এল এসডি) ও ৬ জন খাদ্য পরিদর্শক রয়েছেন।

রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে গত ২১ অক্টোবর থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত এ সংক্রান্ত পৃথক ৬টি বদলির অফিস আদেশ আসে। এছাড়াও রয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের উচ্চমান সহকারী, কম্পিউটার অপারেটর, স্প্রেম্যান ও নিরাপত্তা প্রহরী। তাদের সকলকে পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায় বদলি করা হয়েছে। আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে তাদের যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে অন্যথায় পরদিন থেকে তাদেরকে কর্মবিমুক্ত বলে গণ্য করা হবে।

সরেজমিনে জানা গেছে, গত বোরো মৌসুমে কুড়িগ্রামের জন্য প্রায় ৮ লাখ নতুন বস্তা ক্রয়ের জন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে খাদ্য বিভাগের চুক্তি হয়। ওই প্রতিষ্ঠান বস্তা সরবরাহের সময় চুক্তি ভঙ্গ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে ৮ লাখ পুরনো নিম্নমানের ও ছেঁড়া-ফাটা বস্তা জেলার কয়েকটি খাদ্য গুদামে সরবরাহ করে। ওই সময় রংপুর ও নীলফামারীতে বস্তার সংকট দেখা দিলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সদর খাদ্য গুদাম থেকে সদ্য ক্রয়কৃত ২ লাখ বস্তা সেখানে প্রেরণ করা হয়।

রংপুর ও নীলফামারীতে পাঠানোর পর পুরাতন বস্তা রিসিভ না করে সেগুলো ফেরত পাঠানোর পর দুর্নীতির ঘটনা ফাঁস হয়। এ নিয়ে ২টি তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে এ দুর্নীতির সত্যতা পান। পরে ঢাকা থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি কুড়িগ্রামে আসে।

পুরাতন বস্তা উল্টে স্টেনসিল ব্যবহার ও ক্যালেন্ডার করে নতুন বস্তা হিসেবে সরবরাহ করা হয়েছিল। বস্তার গায়ে নতুন করে লেখা হয় ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’। সংশ্লিষ্ট গুদাম কর্মকর্তারা ওই সব পুরাতন ছেঁড়াফাটা বস্তা গ্রহণের সময় নতুন হিসেবে প্রত্যয়নপত্র দিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বস্তা প্রতি ১৬- ২০ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। এতে মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মোট ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্য করে বলে অভিযোগ ওঠে।

এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে গত ৫-৮ অক্টোবর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবর রহমানের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি সরেজমিন তদন্ত করেন। বস্তা ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগে গণবদলির আদেশ দেয়া হয়। এদিকে এ গণবদলিতে যারা দোষী কিংবা সংশ্লিষ্ট নন তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। বস্তা ক্রয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার পরেও অনেকের বিরুদ্ধে এখনো ব্যবস্থা না নেয়া হলেও যাদের সম্পৃক্ততা নেই এমন কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারিকেও বদলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এমনকি জেলা খাদ্য বিভাগ গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি প্রাথমিক তদন্তের দুর্নীতি হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দিলেও রহস্যজনক কারণে সেই তদন্ত কমিটির দুই পরিদর্শককেও বদলি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে একের দোষ অন্যের উপর চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ এ দুর্নীতির সাথে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাজের সম্পর্ক। এর বাইরে অন্যদের কোন সম্পৃক্ততার সুযোগ নেই। কিন্তু বদলি করা হচ্ছে গণহারে। এতে করে ভুল বার্তা যাচ্ছে সবার কাছে।

এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিজানুর রহমান জানান, অধিকাংশই যারা কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা রংপুর আঞ্চলিক অফিস তাদের একসাথে বদলি করেছে। এছাড়াও আমি নিজে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিদের যাদের চাকুরিকাল দুই বছরের অধিক হয়েছে তাদের বদলি করে সমন্বয় করেছি।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর