৫ মে, ২০২১ ২৩:০৬
করোনা পরবর্তী জটিলতা

খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে পরিবারের আবেদন

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কমেছে হিমোগ্লোবিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে পরিবারের আবেদন

খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় যান তিনি। গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু। তিনি বলেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে ধানমন্ডির বাসায় যান শামীম ইস্কান্দার। তিনি সেখানে ৫-৭ মিনিট ছিলেন।

শামীম ইস্কান্দার রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা মন্ত্রীকে জানান। একইসঙ্গে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে অনুমতির জন্য লিখিত আবেদন করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম ইস্কান্দার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এর আগে সোমবার রাতে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

করোনা পরবর্তী বেশকিছু জটিলতায় ভুগছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার ফুসফুস থেকে তরলজাতীয় পদার্থ (ফ্লুইড) অপসারণ করা হয়েছে। তার ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। এর মাত্রা ওঠানামা করছে। এ ছাড়া অক্সিজেনে হিমোগ্লবিনের মাত্রাও কিছুটা কমেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত চিকিৎসক টিমের দু’জন সদস্য বুধবার এ তথ্য জানান।

চিকিৎসকরা আরও জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠা কমবয়সীদের ক্ষেত্রে এই জটিলতাগুলো তেমন কিছু নয়। যেহেতু খালেদা জিয়ার বয়স ৭৬, তাই জটিলতাগুলো দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছেন তারা। কিছু নতুন ওষুধও দেওয়া হচ্ছে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের আবারও করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে কি না, জানতে চাওয়া হলে এ বিষয়ে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা।

এদিকে বুধবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। তার আশু রোগমুক্তির জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানান, বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে পরিবার ও দলকে জানানো হয়েছে। আপাতত হাসপাতালে রেখেই তাকে চিকিৎসা দেওয়া হবে। খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে এই চিকিৎসক বলেন, করোনায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন, সেরে ওঠার পর তারা কমবেশি কিছু না কিছু জটিলতায় ভুগছেন বা ভোগেন, যাকে ‘পোস্ট কোভিড কমপ্লিকেশন’ বলা হয়। খালেদা জিয়ারও সেটিই হয়েছে। তার বয়স হয়েছে। আগে থেকেই বেশকিছু অসুস্থতা রয়েছে।

ওই চিকিৎসক আরও বলেন, এখন পর্যন্ত শারীরিক যে অবস্থা, তাতে আমরা আশা করছি, তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সেরে ওঠার পর এ ধরনের কিছু জটিলতায় ভোগেন। তবে খালেদা জিয়ার বয়স হয়েছে। এ কারণে চিকিৎসকেরা বিষয়টি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। ফুসফুস থেকে যে তিন ব্যাগ ফ্লুইড বের করা হয়েছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে অন্য কোনো রোগের জীবাণু পাওয়া যায়নি।

বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের এক নেতা জানান, অক্সিজেন দেওয়ার পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারছেন খালেদা জিয়া। তবে সেক্ষেত্রে অক্সিজেনের মাত্রা কখনও ৯০ বা তার নিচে নেমে যায়। অক্সিজেন দিলে এর মাত্রা ৯৯ পর্যন্ত থাকে। দিনে তাকে দুই থেকে চার লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। কয়েক দিন যদি এটি অব্যাহত থাকে, সেক্ষেত্রে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট থাকবে না বলেই তারা আশা করা হচ্ছে।

২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত সোমবার শ্বাসকষ্ট অনুভব করায় তাকে কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এর আগে ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকীরে নেতৃত্বে চিকিৎসা শুরু হয়। করোনা আক্রান্তের ১৪ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়ার করোনা টেস্ট করা হলে ফলাফল আবারও পজেটিভ আসে। ‘ফিরোজা’র বাসায় বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়াও আরও ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হন। তবে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’র সব স্টাফ ইতোমধ্যে করোনামুক্ত হয়েছেন।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর