রবিবার, ২৬ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

২০১৯ সাল থেকে ৫০ বছর গ্যাস সমস্যা হবে না : অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘আগামী ২০১৯ সালের শুরু থেকেই দেশের শিল্পায়নে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। ২০১৯ সাল থেকে পরবর্তী ৫০ বছর পর্যন্ত আপনারা যে পরিমাণ গ্যাস চান, তা-ই পাবেন।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কয়লা পরিবেশদূষণ করলেও আমরা ব্যাপক কয়লানির্ভর হতে যাচ্ছি। কারণ জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না হলে প্রবৃদ্ধি অর্জন নিশ্চিত হবে না।’

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্ট (বিএসটি) আয়োজিত ‘স্বপ্ন পূরণের বাজেট’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এতে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। সভাপতিত্ব ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসটি চেয়ারম্যান এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত প্রফেসর ইমিরিটাস ড. এ কে আবদুল মোমেন।বাজেট সংলাপে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘দেশে এত বছরে ১২ লাখ করদাতা হয়েছে। তবে আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ করদাতার সংখ্যা তিন লাখ বাড়িয়ে ১৫ লাখ এবং পরবর্তী দুই অর্থবছরে ২০ থেকে ২১ লাখ করদাতা তৈরি করতে চাই। দেশে ভ্যাটের চেয়ে আয়কর বেশি আদায় হলে তা হবে প্রগ্রেসিভ কর ব্যবস্থা।’

ভ্যাট আইন নিয়ে মহাসমস্যা আছে দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, যদি ব্যবসায়ীরা নমনীয় হয়ে হিসাব রাখেন, ভ্যাট আইন অনেক সহজভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে। ব্যবসায়ীরা হিসাব না রাখলে কর আদায়কারী কর্মকর্তারা অত্যাচার করেন। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার বা ইসিআর বিনামূল্যে ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করবে।

শিক্ষা প্রসঙ্গে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘জিপিএ-৫ পেয়ে কিছুই জানে না শিক্ষার্থীরা, তা আমাদের এখন ভাববার বিষয়। এটা আমাদের জাতীয় সমস্যা। শিক্ষা নিয়ে সরকারের সমন্বিত চিন্তাধারা দরকার।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, দেশে থাকা অপ্রদর্শিত অর্থ মূল ধারায় নিয়ে আসার জন্য ২০ শতাংশ হারে কর দিয়ে বৈধ করা যেতে পারে। এ অর্থ নিয়ে কেউ যাতে কোনো প্রশ্ন না করেন তা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। তার মতে, দেশের সোয়া কোটি মানুষ ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করেন। তাহলে ১২ লাখ কেন করদাতা হবেন। এ প্রশ্ন উত্থাপন করে তিনি জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করেন।

দেশে দ্রুত করদাতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে উল্লেখ করে সাবেক এই গভর্নর বলেন, ১৯৭২ সালের আদলে পরিকল্পনা কমিশনকে ক্ষমতায়ন করতে হবে, এর বিকল্প নেই। এর সঙ্গে শক্তিশালী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হোক। সমুদ্র অর্থনীতির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। বড় আকারের শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই।

বিএসটি চেয়ারম্যান প্রফেসর ইমিরিটাস ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বড় নয়। আমি মনে করি, ভূমি রেজিস্ট্রেশনে দুর্নীতি ছাড়া কেউ কাজ করতে পারে না।’ তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংকসহ অন্য অনেক ব্যাংককে রাজস্ব আদায়ে যুক্ত করলে আরও কমপক্ষে ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বাড়বে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট বড় হলেও প্রবৃদ্ধি সহায়ক। টেকসই উন্নয়ন সামনে রেখে এ বাজেট করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের এ বিষয়টি বুঝতে হবে।

একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিছু দুষ্টচক্র বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা নেই। পিস নামে একটি স্কুল আছে সারা দেশে, এটা পরিচালনা করে জামায়াত-শিবির। এ স্কুলে জাতীয় সংগীত বাজে না। এমন প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কত দিন ধরে রাখতে পারব আমরা!’

বিএসটি ট্রেজারার ডা. নুজহাত চৌধুরীর সঞ্চালনায় এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বগুড়ার মহাপরিচালক প্রকৌশলী এম এ মতিন, একাত্তর টিভির পরিচালক (বার্তা) সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর