রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

হাতির প্রজনন বাড়াতে বাংলাদেশ-ভারতের নতুন উদ্যোগ

মোস্তফা কাজল

হাতির অবাধ প্রজনন বাড়াতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে দুই দেশের বন বিভাগ। আপাতত বাংলাদেশের পাঁচ জেলায় নেওয়া হবে নতুন এ কার্যক্রম। এ জেলাগুলো হচ্ছে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, শেরপুর ও জামালপুর। বন বিভাগ জানায়, এক দশকে নানা কারণে দেড় শতাধিক হাতির মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বন এলাকায় ২২০ থেকে ৩৫০টি হাতির অস্তিত্ব রয়েছে। বন সংরক্ষক (বন্যপ্রাণী অঞ্চল—পিআরএল) ড. তপন কুমার দে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতীয় হাতির বংশ বৃদ্ধির জন্য প্রজনন বাড়ানোর কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আগে বাংলাদেশের ওই পাঁচ জেলা দিয়ে হাতি নিয়মিত চলাচল করত। কিন্তু ভারত কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ায় চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। ফলে বাধাগ্রস্ত হয় প্রজনন কার্যক্রম। এতে অনেক হাতি সেখানে আটকে যাচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে কয়েক মাস আগে ভারতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কলকাতায় একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে হাতির অবাধ প্রজনন বাড়াতে দুই দেশ একমত হয়। আজ আবার বৈঠক ডাকা হয়েছে। দুই দেশের প্রতিনিধি দল এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে। বন বিভাগ জানায়, বাংলাদেশে বন্যহাতির আবাসস্থল হচ্ছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, বাঁশখালী, পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়া; কক্সবাজারের রামু, উখিয়া ও টেকনাফ; বান্দরবানের লামা ও আলীকদম; রাঙামাটির কাউখালী, কাপ্তাই ও লংগদু এবং খাগড়াছড়ির বিভিন্ন বনে এদের বিচরণ করতে দেখা যায়। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. রেজা খানের জরিপ অনুযায়ী, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে বন্যহাতির সংখ্যা ছিল ৩৮০টি। ২০০০ সালে ওয়ার্ল্ডওয়াইড লাইফ ফান্ডের গবেষণা অনুযায়ী বন্যহাতির সংখ্যা ২৩৯। সর্বশেষ ২০০৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার—আইইউসিএনের জরিপে পাওয়া যায় ২২৭টি। ফলে বাংলাদেশে হাতির সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। পৃথিবীতে দুই প্রজাতির হাতি রয়েছে। এশিয়ান প্রজাতি ও আফ্রিকান প্রজাতি। বাংলাদেশের হাতি এশিয়ান প্রজাতির। আফ্রিকান প্রজাতির হাতি পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের দাঁত গজায়। একটি হাতি প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ কেজি খাবার খায়। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ হাতির ওজন ৫ টন। আর স্ত্রী হাতির ওজন ৪ টনের বেশি। স্ত্রী হাতি সাধারণত একবারে একটি বাচ্চা দেয়। এদের গর্ভধারণকাল ২২ মাস। দুবার ৪ বছর পরপর হাতি বাচ্চা দেয়। জন্মের সময় বাচ্চার ওজন ৯০ কেজি। দিনে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে হাতি। এদের গতি ঘণ্টায় ২৫ মাইল। আইসিইউএনের তথ্যানুযায়ী চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে হাতি আছে ৩০ থেকে ৩৫টি। কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বিভাগ মিলিয়ে আছে ৮২ থেকে ৯৩টি। বান্দরবানে আছে ১২ থেকে ১৫ এবং লামা বিভাগে আছে ৩৫ থেকে ৪০টি হাতি। কক্সবাজার উত্তর বিভাগে ৭ থেকে ৯ এবং দক্ষিণ বিভাগে ৩০ থেকে ৩৫টি হাতি রয়েছে। আর অভিবাসী হাতির সংখ্যা ৮৪ থেকে ১০০। বাংলাদেশে হাতি কমে যাওয়ার ৯টি কারণ আইইউসিএনের গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে বনাঞ্চল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া, খাদ্য সংকট ও চলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়া, যত্রতত্র জনবসতি গড়ে ওঠা এবং চোরা শিকারিদের নিষ্ঠুরতা উল্লেখযোগ্য। তবে ভয়ঙ্কর হচ্ছে চোরা শিকারিদের উপদ্রব। ২০০১ থেকে ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত বান্দরবান ও কক্সবাজারের ছয় উপজেলার বনাঞ্চলে দাঁত ও হাড়গোড়ের জন্য ১৫২টি হাতি হত্যা করা হয়। তাই উদ্যোগ নিতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। বন বিভাগ জানায়, কোন পথ দিয়ে হাতি আসে, ফিরে যায়, কোথায় থাকে ইত্যাদি বিষয় একটি মানচিত্রে নির্ণয় করা হবে। এরপর দুই দেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির পর সমঝোতা স্মারক সই হবে। সে অনুযায়ী সীমান্তের কাঁটাতার সরিয়ে হাতি চলাচলের মাধ্যমে প্রজনন বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।

সর্বশেষ খবর