রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিডিআর বিদ্রোহ

প্লট-ফ্ল্যাট কিছুই পাননি শহীদ নুরুলের পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিডিআর বিদ্রোহে বাধা দিতে গিয়ে প্রাণ হারানো সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের পরিবার ভালো নেই। গত আড়াই বছরেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ঘোষিত প্লটটিও পায়নি এ পরিবার। অথচ বিদ্রোহে সব শহীদ পরিবারের সদস্যরাই প্লট পেয়েছে বহু আগেই। গত আড়াই বছর ধরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় নুরুল ইসলামের পরিবারের জন্য বরাদ্দ প্লটের ফাইলটি বন্দী হয়ে আছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান কার্যালয় ও উত্তরার কার্যালয়ে একাধিকবার গিয়ে নুরুল ইসলামের পরিবার সান্ত্বনা পেয়েছে একটাই— পেয়ে যাবেন প্লট। রাজউক বলছে, সরকার আপনাদের (শহীদ পরিবার হিসেবে) প্লট দিয়েছে। তা শিগগিরই পেয়ে যাবেন। কিন্তু সেই ‘শিগগিরই’ কতদিনের, জানে না নুরুল ইসলামের পরিবার। নুরুল ইসলামের স্ত্রী আয়শা বেগম গত ৩ বছর ধরে অসুস্থ। তার লিভার ড্যামেজ হয়ে যাচ্ছে। অথচ মিলছে না চিকিৎসা সহায়তা। শহীদ পরিবার হিসেবে সরকারের কাছ থেকে পাওয়া আর্থিক সহায়তার পুরোটাই তার চিকিৎসায় ব্যয় করেছেন ছেলেরা। এ পর্যন্ত ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়ে গেছে আয়শার চিকিৎসায়।

বিদ্রোহে বিডিআরের সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি নিজ বাহিনীর বিদ্রোহ ঠেকাতে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন। তারই ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান জানান, বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা ছাড়াও বিডিআরের বেশকিছু সদস্য মারা যান। এরমধ্যে তার বাবাই সেনা অফিসারদের নির্মমভাবে হত্যার আগে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। সেই কারণে ঘাতক বিডিআর সদস্যরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বিদ্রোহে বাধা দিতে প্রাণ হারানোয় ৫৭ সেনা সদস্যের পাশপাশি তার বাবা সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামকেও শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার। বিদ্রোহে শহীদ পরিবারের জন্য সরকার প্লট বরাদ্দের ঘোষণার পর ইতিমধ্যে সবাই প্লট পেয়ে গেছেন। সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারকে যে প্লট দেওয়া হয়েছে ওই প্লটের জায়গা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছিল। কিন্তু তার বাবা ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। তাই সেখানে প্লট দেওয়া যায়নি। এ ঘটনায় বর্তমান বিজিবিকে লিখিতভাবে জানানো হলে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেয়। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর নির্দেশনা দিয়ে প্লট ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়ে আদেশ পাঠায়। কিন্তু গত আড়াই বছরও প্লট মেলেনি।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টায় নুরুল ইসলাম নাস্তা না করেই বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন ডিজিকে রিসিভ করার জন্য। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পিলখানায় গোলাগুলির পর থেকে নুরুল ইসলামের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। কিছুক্ষণ পর তার ছোট মেয়ে নাসরীন আক্তার ইতি এসএম কোয়ার্টারের দ্বিতীয় তলার বাসা থেকে দেখতে পায় চার মুখোশধারী জওয়ান তার বাবাকে কাঁধে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত কাছে ছুটে যায় ইতি। কিন্তু নুরুল ইসলাম পায়ে ব্যথা পেয়েছেন, তাই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে— জানিয়ে ইতিকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেয় বিদ্রোহী জওয়ানরা। পরে জানতে পারেন পিলখানার দরবার হলে বিদ্রোহীদের বাধা দিতে গিয়ে মারা যান সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম।

পারিবারিক সূত্র জানায়, কর্মজীবনে নুরুল ইসলাম সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। দুদফা তার গ্রামের বাড়ি, জমিজমা নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। পৈত্রিকভাবে গ্রামেও কোনো সম্পদ নেই। নুরুল ইসলামের মৃত্যুর পর অনেকটা অসহায় হয়ে পড়ে পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে পিলখানায় একটি ৫ তলা বিল্ডিংয়ের দোতলায় আছেন তারা। কতদিন সেখানে থাকতে পারবেন এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।

নুরুল ইসলামের স্ত্রী আয়েশা বেগম জানান, সেনা কর্মকর্তাদের বাঁচাতে তার স্বামী বিডিআর জওয়ানদের ঠেকাতে গিয়ে প্রাণ হারান। তার স্বামী অত্যন্ত সৎ ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি চারবার ডিজি পদক পেয়েছিলেন। সৎ ও অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য সরকার তাকে পবিত্র হজব্রত পালন করায়। চার সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সর্বদাই তিনি মানসিকভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর