মঙ্গলবার, ১ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

গান ও কবিতায় শ্রমিকের জয়গান

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

শ্রমিকের ঘামে আর শ্রমেই গড়ে উঠেছে দেশের অবকাঠামো। এ ঘাম আর শ্রমের সঙ্গে মিশে আছে উন্নয়ন ও নির্মাণের সব ইতিহাস। তবে এখনো শ্রমিকরা অবহেলিত, বঞ্চিত তাদের ন্যায্য মূল্য ও মূল্যায়ন থেকে। নানা শোষণ থেকে শ্রমিক মুক্তি না পেলে এগিয়ে যাবে না সমাজ ও রাষ্ট্র। কথামালা ও গান-কবিতায় শ্রমিকের জয়গানে এসবই মূর্ত করে তুললেন দেশের সংস্কৃতিকর্মীরা। বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে শ্রমিক দিবসের এক দিন আগে গতকাল বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ স্লোগানের এ আয়োজন।

গানের সুরে আর কবিতার দৃপ্ত উচ্চারণে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে শ্রমিকমুক্তির আন্দোলনেরই আহ্বান জানালেন শিল্পীরা।

কথামালা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দুই পর্বে বিভক্ত এ আয়োজনের প্রথম পর্বে ছিল আলোচনা, দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যজন মান্নান হীরা। স্বাগত বক্তৃতা করেন গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মানজার চৌধুরী সুইট।

কামাল লোহানী বলেন, বিশ্বের কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও দাবি আদায়ের দিবস মহান ‘মে দিবস’। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের ‘হে’ মার্কেটের শ্রমিকরা উপযুক্ত মজুরি আর দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। আন্দোলনরত ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের রুখতে গিয়ে একসময় পুলিশবাহিনী তাদের মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। যারা আমরা শ্রমিকদের এই শক্তিকে ভালোবাসি আজও তাদের নাম মনে রেখেছি। সে সময় শ্রমিকদের সংহতি প্রবল হয়। এ প্রবল শক্তির দ্বারাই রাষ্ট্র ও মালিকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তারা। এখন শ্রমিক শ্রেণির সেই সংহতিকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন সংগঠনগুলোর নেতারা। যত দিন মজদুর শ্রেণির লোকদের সংগঠিত করতে না পারা যাবে তত দিন শ্রমিকদের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে না। অধিকার কেড়ে নেওয়ার শক্তি আমরা ক্রমান্বয়ে হারাচ্ছি। পয়লা মে আমাদের এই প্রতিজ্ঞা করা উচিত আমাদের প্রাপ্য আদায় করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, মে দিবসকে আমরা শুধু শ্রমিকদের মধ্যে এখন আর সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। এটাকে মানবমুক্তির দিবস হিসেবে বিবেচনায় আনতে চাই। আমরা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের রাজনৈতিক মুক্তি পেয়েছি কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো পাইনি।

আলোচনা পর্ব শেষে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বের শুরুতেই সাংস্কৃতিক সংগঠন বহ্নিশিখার শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করে ‘ফুলবনে লড়ার দিন নয় অদ্য’ ও ‘জিন্দাবাদ নেলসন ম্যান্ডেলা’সহ দুটি গান। এরপর সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী দলীয়ভাবে পরিবেশন করে ‘নয়া জামানা দেয় নিশান’। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশন করে ‘লাল সালাম’ ও ‘বুক বেঁধে লড়তে হবে’ গান দুটি। এ ছাড়া সম্মেলক কণ্ঠে আরও সংগীত পরিবেশন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও আনন্দন।

একক সংগীত পরিবেশন করেন শিমুল সাহা, বুলবুল ইসলাম, অলোক দাশগুপ্ত, সমর বড়ুয়া, আসিফ ইকবাল সৌরভ, শ্রাবণী গুহরায়, নবনীতা জাহিদ চৌধুরী, সানজিদা মনজুরুল হ্যাপি প্রমুখ। বাচিকশিল্পী ফয়জুল আলম পাপ্পু আবৃত্তি করেন দীনেশ দাশের ‘কাস্তেটা শান দাও বন্ধু’। এ ছাড়া আরও আবৃত্তি করেন ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু।

প্রাঙ্গণেমোরের ‘হাছনজানের রাজা’

হাছন রাজা ছিলেন সুনামগঞ্জের জমিদার। প্রথম দিকে তিনি ছিলেন অত্যাচারী, ভোগ-বিলাসী, নারীলোভী ও বেহিসাবি। আর জীবনের শেষ দিকে জনসেবায় নিয়োজিত করেছিলেন নিজেকে। এমন গল্প নিয়ে প্রাঙ্গণেমোর মঞ্চে এনেছে নাটক ‘হাছনজানের রাজা’। গতকাল সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় নাটকটি। শাকুর মজিদ রচিত এ নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন অনন্ত হীরা।

বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার জমিদার ছিলেন হাছন রাজা। পিতা ও মাতা উভয়ের কাছ থেকে পাওয়া বিশাল জমিদারির মালিকানা চলে আসে কিশোর বয়সে। অর্থ, বেহিসাবি সম্পদ আর ক্ষমতার দাপটে বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। জাগতিক লোভ-লালসা, ক্ষমতায়ন, জবরদখল করেও তিনি তার প্রতিপত্তি বাড়ানোর কাজে প্রবৃত্ত ছিলেন। কিন্তু একসময় তার ভিতরের ভ্রান্তি ঘুচে যায়। মধ্যপঞ্চাশে এসে তিনি ভিন্ন এক মানুষে পরিণত হয়ে যান। তার বোধ হয় যে এ জগৎ সংসারের সব অনাচারের মূলে আছে অতিরিক্ত সম্পদ। কিছুদিনের জন্য অতিথি হয়ে আসা মানুষ আসলে মহাশক্তির কাছে একেবারে নশ্বর। তিনি তার সম্পদ জনকল্যাণের জন্য উইল করে দিয়ে কয়েকজন সঙ্গিনীকে নিয়ে হাওরে হাওরে ভাসতে থাকেন। আর এর মধ্যে খুঁজতে থাকেন সেই মহাপরাক্রমশীল স্রষ্টাকে। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকটির কাহিনী।

বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রামিজ রাজু, আউয়াল রেজা, মাইনুল তাওহীদ, সাগর রায়, শুভেচ্ছা রহমান, সবুক্তগীন শুভ, জুয়েল রানা, আশা, প্রকৃতি, প্রীতি, সুজয়, নীরু, সুমন, বাঁধন, রুমা প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর