বৃহস্পতিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভারতেও নিষিদ্ধ হচ্ছে জেএমবি

নয়াদিল্লি ও কলকাতা প্রতিনিধি

বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ— জেএমবিকে ভারতেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হতে পারে। ভারতে দ্রুতগতিতে উত্থানের চার বছর পর অবশেষে আনলফুল অ্যাক্টিভিটিস প্রিভেনশন অ্যাক্ট (ইউপিএ) অনুযায়ী দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। চার বছর ধরে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে জেএমবির প্রভাব ও কার্যকলাপের প্রমাণ পেয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দারা। বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশটিতে নিষিদ্ধ এই সংগঠনটি আরও সক্রিয় হতে পারে। অতিসম্প্রতি জেএমবি ভারতের বিভিন্ন শহরে তাদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এমন এক পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের এ পদক্ষেপ জঙ্গি সংগঠনটিকে অর্থায়ন, নিয়োগ কার্যক্রম ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ রোধে সব রাজ্যের পুলিশ ও কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোর হাতে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করবে।

সূত্রে খবর, ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএর তরফে জেএমবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রস্তাব পাওয়ার পরই দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে। শিগগিরই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অভিমত, জেএমবিকে নিষিদ্ধ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, ইতিমধ্যে জঙ্গি সংগঠনটি ভারতেও তাদের শাখা খুলেছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে জামা’আতুল মুজাহিদীন ইন্ডিয়া (জেএমআই)। সালাউদ্দিন সালেহ এবং তার সহকারী জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন জেএমআইর প্রধান উদ্দেশ্য হলো ধর্মান্তরকরণ, প্রশিক্ষণ ও সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই ভারত উপমহাদেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা। এই সালাউদ্দিনকে ধরতেই এনআইএর তরফে পাঁচ লাখ রুপি আর্থিক পুরস্কারেরও ঘোষণা দিয়েছে এনআইএ। মনে করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গেই কোথাও আত্মগোপন করে রয়েছেন সালাউদ্দিন। জানুয়ারিতে বিহারের বুদ্ধগয়া মন্দির চত্বরে শক্তিশালী ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণের পেছনে নাম জড়িয়েছে সংগঠনটির। এ ঘটনায় গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন জঙ্গিকে আটকও করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ও এনআইএ। ঘটনার পর থেকেই জেএমবির নেতা ও তাদের সঙ্গীরা গা-ঢাকা দিয়েছে।

২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর এনআইএর তদন্তে প্রকাশ পায়, জেএমবি কেবল পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ঝাড়খন্ড বা ভারতের অন্য শহরগুলোতেই ঘাঁটি গড়ছে না, বরং অর্থ সংগ্রহ করা, মুসলিম যুবকদের নিজেদের দলে টানা, জিহাদি ও তীর-ধনুকের মতো প্রশিক্ষণ দেওয়া, ভারতের মাটিতে অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপেও মদদ দিচ্ছে। ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিয়ে স্থানীয় নারীদের বিয়ে করার মতো কৌশলও অবলম্বন করছে জেএমবি জঙ্গিরা। আর এ কাজে লস্কর-ই-তৈয়েবার মতো পাকিস্তানের মদদপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলোরও সহায়তা পাচ্ছে তারা। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশ থেকেও আর্থিক সহায়তা তারা পাচ্ছে। বিদেশ থেকে আসা সেই অর্থ মাদ্রাসা, মসজিদ ও মুসলিম যুবকদের দলে টানতে সোশ্যাল মিডিয়াতেও লাগানো হচ্ছে।

সাম্প্রতিক গোয়েন্দা রিপোর্টে প্রকাশ, জেএমবির সদস্যরা হায়দরাবাদ, মুম্বাই, পুনে, জম্মু-কাশ্মীরসহ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে আস্তানা গেড়েছে এবং আধার কার্ড, প্যান কার্ড সংগ্রহ করে ভারতীয় পরিচয়পত্রও বানিয়ে নিয়েছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় ইটভাটার শ্রমিক, কাগজকুড়ানিসহ দিনমজুরের কাজে যুক্ত হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য এও বলছে, ভারতের বিভিন্ন জায়গায় কমপক্ষে ৬০টি মডিউল সক্রিয় রয়েছে, যার একেকটি মডিউলে ১০ থেকে ১২ জন করে সদস্য রয়েছে।

সর্বশেষ খবর