মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

টিসি দেওয়ায় ভিকারুননিসা ছাত্রীর আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্কুল থেকে ছাড়পত্র (টিসি) দেওয়ায় এবং শিক্ষার্থীর সামনে বাবা-মাকে ‘অপমান’ করায় ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বেইলি রোড শাখার এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে। তার নাম অরিত্রি অধিকারী (১৫)। সে নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। গতকাল দুপুরে শান্তিনগরের ২৩/২৪ নম্বর বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে সে আত্মহত্যা করে।  অরিত্রির বাবা দিলীপ অধিকারী জানান, বড় মেয়ে অরিত্রি অধিকারী, ছোট মেয়ে ঐন্দ্রীলা অধিকারী ও স্ত্রী বিউটি অধিকারীকে নিয়ে শান্তিনগরে থাকেন। গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। তিনি কাস্টমসের সিঅ্যান্ডএফের ব্যবসা করেন। ছোট মেয়ে ঐন্দ্রীলা অধিকারীও ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থী। তিনি জানান, অরিত্রির বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রবিবার ইতিহাস পরীক্ষায় নিষেধ থাকা সত্ত্বেও অরিত্রি মোবাইল ফোন নিয়ে কেন্দ্রে যায়। পরে ফোনটি দেখতে পেয়ে শিক্ষকরা তা নিয়ে নেয় এবং অরিত্রিকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেয়। গতকাল সকালে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য স্কুলে যায় অরিত্রি। কিন্তু তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দিয়ে বাবা-মাকে স্কুলে নিয়ে আসতে বলে কর্তৃপক্ষ। তখন আমি ও আমার স্ত্রী গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, অরিত্রি পরীক্ষায় মোবাইল ফোন ব্যবহার ও নকল করেছে। তাকে স্কুল থেকে টিসি দেওয়া হয়েছে। টিসি না দেওয়ার জন্য স্কুলের শিক্ষকদের অনেক অনুরোধ করেন তারা। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো কথা না শুনে অরিত্রিকে স্কুলে রাখা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়।

 স্কুল থেকে বের হয়ে স্ত্রী ও মেয়েকে বাসায় নামিয়ে দেই।

তাদের বাসায় রেখে বিভিন্ন জায়গায় ফোনে তদবিরের চেষ্টা করি। হঠাৎ বাসা থেকে ফোন আসে অরিত্রি কক্ষের দরজা বন্ধ করে রেখেছে। তত্ক্ষণাৎ বাসায় গিয়ে দরজা ভাঙলে অরিত্রিকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অরিত্রির এক স্বজন জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অরিত্রির বাবা-মা অনেক অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক কোনো কথাই শুনেননি। তিনি মৌখিকভাবে অরিত্রির টিসির কথা জানিয়ে দেন। আর গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে টিসি দেওয়ার কথা বলেন। প্রধান শিক্ষক অরিত্রির বাবার অনুরোধ তো রাখেনইনি বরং তাকে অনেক অপমান করেন। অপমান সইতে না পেরে দিলীপ অধিকারী আবেগে কান্নাজুড়ে দেন। অরিত্রি এটি প্রত্যক্ষ করে। আর এসব রাগ-ক্ষোভে সে আত্মহত্যা করেছে।

কাঁদতে কাঁদতে দীলিপ অধিকারী বলেন, অরিত্রিকে টিসি না দিতে আমি এবং তার মা স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। অরিত্রিকে আরেকবার সুযোগ দিলে হয়তো আমার মেয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেত না!

এ বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস জানান, অরিত্রি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিল। রবিবার পরীক্ষার দিন মোবাইলে বইয়ের ছবি তুলে এনে বেঞ্চের ওপর রেখে নকল করে। এ অপরাধে তার মোবাইল নিয়ে নেওয়া হয়। গতকাল তার মা-বাবাকে স্কুলে আসতে বলা হয়। পরে তারা স্কুলে আসেন। তাদের অরিত্রির বিষয়টি পরিষ্কার করে জানানো হয়। তবে অরিত্রির মা-বাবাকে অপমান এবং অরিত্রিকে টিসি দেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

তিনজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু

গতকাল রামপুরার বনশ্রীতে একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে ইন্টারনেটের তার লাগানোর সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নাসির হোসেন (৩০) নামে ক্যাবল অপারেটরের মৃত্যু হয়েছে। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানার খিলগাতী গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে নাসির। দক্ষিণ বনশ্রীর জি-ব্লকে থাকতেন এবং স্থানীয় অন্তরঙ্গ.কম নামে ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।

গতকাল উত্তর বাড্ডা হোসেন মার্কেটের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় রফিকুল ইসলাম রফিক (৩৬) নামে এক প্রাইভেটকার চালকের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি কুমিল্লার হোমনা থানার কৃষ্ণপুরে। স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে উত্তর বাড্ডা বাওলিয়াপাড়া মসজিদ সংলগ্ন একটি বাসায় থাকতেন।

এদিকে, গতকাল বিকালে বংশালের আগামাছি লেনে একটি নির্মাণাধীন ভবনে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ইমরান হোসেন (২৫) নামে এক শ্রমিক মারা যান। তার বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপায়।

সর্বশেষ খবর