শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
সালতামামি ২০১৮

আশা-নিরাশার দোলাচল চট্টগ্রামে

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম নানা বিষয়ে বছরজুড়ে আলোচনায় থাকে। বর্ষা মৌসুমে তার বিষয় হয়ে থাকে জলাবদ্ধতা। সঙ্গে থাকে পাহাড়ধসে মৃত্যু। আছে যানজটের ভোগান্তি। কিন্তু এসব সমস্যাকে ছাপিয়ে আছে আশা-প্রত্যাশার সম্ভাবনা। জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া হয়েছে মেগা প্রকল্প এবং সুয়ারেজ ব্যবস্থা বাস্তবায়নও এখন প্রক্রিয়াধীন। এ বছরই যাত্রা করল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্র সংসদের উদ্যোগে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের অতি প্রয়োজনীয় ‘বোনস লাইবেরি’ (এনাটমি লাইব্রেরি) এবং তরুণ প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেছারের উদ্যোগে ‘অজ্ঞাত রোগীর সেবায় বিশেষ সেল’। তাছাড়া গত ১৪ অক্টোবর ভারী বর্ষণে পাহাড়-দেয়ালধসে নারী-শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়। জানা যায়, চট্টগ্রাম ওয়াসা সুয়ারেজ ব্যবস্থায় ‘চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই ইম্প্রুভমেন্ট অ্যান্ড স্যানিটেশন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৩৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ৩৮০৩ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা এবং ওয়াসা দেবে ৫ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে পুরো নগরকে ছয় ভাগ করে কাজ শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে হালিশহর প্রকল্পের অধীনে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে ড্রেনেজ ব্যবস্থার আওতায় আনার কাজ শুরু হবে।

প্রকল্পের উপপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানটি পূর্ণ বাস্তবায়নের পর ২০৬০ সাল নাগাদ শহরের ৬৫ শতাংশ এলাকা পাইপলাইন সিস্টেমে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আসবে। অবশিষ্ট ৩৫ শতাংশ এলাকা পদ্ধতিগত উন্নয়ন সাধিত হবে। ২০২৩ সালে এ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।’ তাছাড়া চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে নগরের কিছু খালের মাটি উত্তোলন, খননসহ নানা কাজ সম্পন্ন করেছে। প্রথম পর্যায়ে ৫০০ কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং সিডিএ যানজট নিরসন ও নগর উন্নয়নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর মধ্যে আছে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, কালুরঘাট থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত রিভার ড্রাইভ রোড নির্মাণ, পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত রিং রোড নির্মাণ, কুলগাঁ এলাকায় বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ, চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বর্জ্য থেকে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন, কালুরঘাট এলাকায় সাড়ে ১০ একর জায়গায় হাইটেক পার্ক নির্মাণসহ নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা যায়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্র সংসদের উদ্যোগে গত ৯ সেপ্টেম্বর যাত্রা করে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের অতি প্রয়োজনীয় ‘বোনস লাইব্রেরি’ (এনাটমি লাইব্রেরি)। কলেজের নতুন একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয়তলায় লাইব্রেরির পাশেই মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের হাড় সংরক্ষণ করা হয়। এটি প্রতিষ্ঠায় বিশেষ সহযোগিতা করেছেন ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবু তৈয়ব। লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে মাথা, বুকের পাঁজর, মেরুদ-, হাত-পাসহ মানবদেহের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অস্থি। সন্নিবেশিত আছে এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বৈজ্ঞানিক নাম, হাড়ের শারীরিক অবস্থান, হাড়ের নম্বর, হাড়ের কোন অংশের কী নাম। লাইব্রেরিতে বসে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা হাড় নিয়ে নানামুখী গবেষণা ও জ্ঞানচর্চার সুযোগ পাবেন। পড়াশোনার জন্য লাইব্রেরিতে বোনস ইস্যুকরণের ব্যবস্থাও রয়েছে। লাইব্রেরিটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রার সময় প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতি সেটে ২০৬টা করে বোনস নিয়ে ১৫ সেট বোনস এবং প্রায় ১৩০টি প্রধান এবং মৌলিক গ্রন্থ নিয়ে যাত্রা করে। চমেক ছাত্র সংসদের সদ্য বিদায়ী ভিপি সাব্বির আহমেদ নাহিদ বলেন, ‘বোনস মেডিকেলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষার অন্যতম প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। সরকারি মেডিকেল কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র পরিবারের। মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীর প্রথম বর্ষের এনাটমি বিষয়ে লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন হয় ৪০ হাজার টাকা মূল্যের একটি বোনস সেট। সে হিসাবে প্রতি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের বছরে এক কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।’ এদিকে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের একটি কর্নারে স্থাপন করা হয়েছে ‘অজ্ঞাত রোগীর বিশেষ সেল’। এখানে রাখা হয়েছে একটি শোকেস। সেখানে লেখা আছে ‘এই শোকেসে সংরক্ষিত ওষুধ ও যাবতীয় সরঞ্জাম শুধু অজ্ঞাত রোগীদের জন্য’। সঙ্গে আছে লাল রঙের বাঁধাই করা একটি খাতা। নিবন্ধন করে এই খাতা থেকেই অজ্ঞাত রোগীর জন্য ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করা হবে। অজ্ঞাত রোগীর সেবক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেছার বলেন, অজ্ঞাত রোগীর জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে সব ধরনের অজ্ঞাত রোগী এ সেল থেকে বিনামূল্যে ওষুধ পাচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর