শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

পাঠকশূন্য রাজশাহীর লাইব্রেরিগুলো

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

আগে বিকালেও লাইব্রেরিতে বসার জায়গা ফাঁকা থাকত না। সকালেও বসত জমজমাট আড্ডা। নতুন কোন বই এলো, কোন বইটি এখনো পড়া হয়নি- এমন নানা আলোচনা আর আড্ডায় মজে উঠত লাইব্রেরিগুলো। কিন্তু এখন উল্টো চিত্র। বই আসছে নতুন নতুন, কিন্তু পাঠক নেই নতুন নতুন। আগে যারা নিয়ম করে আসতেন, তারাও যেন এক রকম ছুটি নিয়েছেন।  পাঠকরা অনলাইনের মাধ্যমে এক ঝলক দেখে নেন চাহিদা মাফিক বই। রঙিন মলাটের সাদা কাগজে, কালো লেখা এখনো পাঠক টানে। তবে সেই স্বাদ পেতে মানুষ লাইব্রেরিগুলোতে ছুটে আসছে না। লাইব্রেরির দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, বইয়ের প্রতি মানুষের এখনো ভালোবাসা আছে। তবে আগের মতো নিয়ম করে কেউ আর আসেন না লাইব্রেরিতে। রাজশাহীতে রয়েছে বিভাগীয় সরকারি গ্রন্থাগার, রাজশাহীর সাধারণ গ্রন্থাগার, শাহ মখদুম ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি, জননী গ্রন্থাগার ও সাংস্কৃতিক সংস্থা এবং পদ্মা লাইব্রেরি। রাজশাহী বিভাগীয় সরকারি গ্রন্থাগারটি সরকারিভাবে চলে। সপ্তাহে বৃহস্পতি ও শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। গ্রন্থাগারটিতে ১৩০টি সেলফে ৮৭ হাজার ৫১৮টি বই আছে। আছে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকাও। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ১৫ খন্ডের দলিলসহ এখানে আছে বহু মূল্যের ইংরেজি বাংলা মিলে অনেক পুরাতন ও বহু মূল্যবান বই। আছে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু কর্নার।

রাজশাহী বিভাগীয় সরকারি গ্রন্থাগারের অফিসপ্রধান আবু সাঈদ জানান, এখনো এখানে পাঠক আসেন। তবে শিশু পাঠক অনেক কম। কারণ তাদের অভিভাবকরা আনতে চান না। গ্রন্থাগারটিতে আছে বেশ কয়েকজন প্রবীণ পাঠকও। তাদের জন্য আলাদা টেবিল আছে। মাসুদ রানা (৬৬) নামের এক পাঠক জানান, চাকরি শেষ। ’৮৩ সাল থেকে তিনি রাজশাহীর বিভিন্ন গ্রন্থাগারে পড়াশোনা করছেন। এখানেও তার ১০ থেকে ১২ বছর ধরে যাওয়া আসা। অবসরের বেশিরভাগ সময় এখানে কাটে তার। সপ্তাহের ছুটির দিনের সময়গুলো তার কষ্টে কাটে। তবে আগের চেয়ে পাঠক কমেছে বলে জানান তিনি।

রাজশাহীর সাধারণ গ্রন্থাগারটি পাবলিক লাইব্রেরি নামে বেশি পরিচিত। ১৮৮৪ সালে নগরীর মিঞাপাড়ায় স্থাপিত হয় এটি। গ্রন্থাগারটিতে প্রায় ৩৬ হাজার বই ও প্রায় ২০ হাজারের মতো দৈনিক, সাপ্তাহিকও মাসিক পত্রিকা সংরক্ষিত আছে। বর্তমানে লাইব্রেরিটির বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ফলে পাঠক নেই সেখানে।

শাহ মখদুম ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরিটি ১৮৯১ সালে স্থাপিত হয়। এখানে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এখানে দুর্লভ বই বলতে আরবি, ফারসি ও উর্দু। কার্ডধারী, ইনস্টিটিউট ও শিশু এ তিন ধরনের সদস্য আছে এখানে।

নগরীর কয়েরদাঁড়ায় আছে জননী গ্রন্থাগার ও সাংস্কৃতিক সংস্থা। ১৯৯৬ সালের ২১ জানুয়ারি এ গ্রন্থাগারটির উদ্বোধন করা হয়। এখানে প্রায় ৪ হাজার ৩০০ বই ও পত্রিকা আছে। এ গ্রন্থাগারের মূল পাঠক গৃহিণীরা। এখান থেকে তারা বই সংগ্রহ করে বাসায় নিয়ে পড়তে পারেন।

নগরীর তালইমারির পদ্মা লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালের ১৫ অক্টোবর। লাইব্রেরির সাধারণ সদস্য প্রায় ৮০০ জন। আর আজীবন সদস্য আছেন ৫৫ জন। এতে রয়েছে ৯ হাজারের বেশি বই। তবে সদস্যরা অনেকে আসেন না। সেখানেও এখন ৫ তলা ভবনের নির্মাণের কাজ চলছে।

রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদ ইকবাল বলেন, এখন সবাই দামি সার্টিফিকেটের দিকে ঝুঁকছে, ভালো মানুষ হওয়ার দিকে নয়। ঘরে বসেই গতানুগতিক নোট পড়ে ভালো রেজাল্ট করা যায়। এ ছাড়া অবসরটা মানুষ অন্যভাকে কাটাতে পছন্দ করছেন। যে কারণে বইয়ের সঙ্গে মানুষের আগের সম্পর্কটা এখন আর নেই। যে কারণে মানুষ লাইব্রেরিমুখী হচ্ছে না। এটি শুভ লক্ষণ নয়।

 

সর্বশেষ খবর