বুধবার, ৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

সাহিত্যকর্মের মধ্যেই যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন আল মাহমুদ

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

আল মাহমুদ ছিলেন এই উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। নিজ সাহিত্য কর্মের মধ্য দিয়েই তিনি সাহিত্যামোদীদের অন্তরে যুগের পর যুগ বেঁচে থাকবেন। কবিতার মাধ্যমে তিনি আধ্যাত্মিকতাকে তুলে ধরেছেন। সাহিত্যের যে শাখায় হাত দিয়েছেন সে শাখায়ই পেয়েছেন ঈর্ষণীয় সফলতা। তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। একজন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার পরও এই রাষ্ট্র তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেয়নি। কবি আল মাহমুদের নাগরিক শোকসভায় এভাবেই আল মাহমুদকে মূল্যায়ন করলেন সুহৃদ ও শুভাকাক্সক্ষীরা। আল মাহমুদ পরিষদের আয়োজনে গতকাল বিকালে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই শোকসভা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক মাহমুদ শাহ কোরেশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আল মাহমুদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা ও স্মৃতিচারণ করেন সংগীত ও সাহিত্য ব্যক্তিত্ব মুস্তাফা জামান আব্বাসী, সাবেক বিচারপতি আবদুর রউফ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি আল মুজাহিদী প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আল মাহমুদ পরিষদের আহ্বায়ক কবি আসাদ চৌধুরী।

জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, কাব্য প্রতিভার ঔজ্জ্বল্যেই লোক লোকান্তর, কালের কলস ও সোনালী কাবিন’ মাত্র তিনটি কাব্যগ্রন্থের মধ্য দিয়েই আল মাহমুদ বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন। ঢাকা বেতারে আমি তার ‘লোক লোকান্তর’ কাব্যগ্রন্থটির সমালোচনা পড়েছিলাম। ‘সোনালী কাবিন’-এ আঞ্চলিক ভাষার শব্দ প্রয়োগে তিনি যে শিল্পিত রূপ তুলে ধরেছিলেন তা যে কোনো ভাষার জন্য গৌরবের। পানকৌড়ির রক্ত গল্পে বেদে সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রাকে তীক্ষè ও সাবলীলভাবে তুলে ধরেছেন। আল মাহমুদের স্মৃতিকথা ‘যেভাবে বেড়ে উঠি’ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্মৃতিকথা। ‘পাখির কাছে ফুলের কাছে’ রচনাও এদেশের শিশু সাহিত্যে অনন্য জায়গা করে নিয়েছে। আল মাহমুদ সাহিত্যের যে ক্ষেত্রেই হাত দিয়েছেন সেখানেই ঈর্ষণীয় সাফল্য লাভ করেছেন। মোট কথা তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি নেই, কিন্তু তার রচনা আমাদের মাঝে অনন্তকাল বেঁচে থাকবে।

মুস্তাফা জামান আব্বাসী বলেন, কবি আর কবিতা যখন এক হয়ে যায় তখনই তা হয়ে ওঠে শিল্প। কবি আল মাহমুদের কবিতার ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে রয়েছে শিল্পের সুষমা। আমি আল মাহমুদকে অনুসরণ করেছি। তার জীবন ও কাব্যকে আমি অনুসরণ করেছি। সেখানে জীবন ও ধর্মকে পেয়েছি। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া সবাই নজরুলকে হিংসা করেছে। যারা নজরুলকে হিংসা করেছে তারা একঘরে হয়ে গেছে। আল মাহমুদকে যারা হিংসা করে তারাও এক ঘরে হয়ে যাবে।

সাবেক বিচারপতি আবদুর রউফ বলেন, আল মাহমুদ আধ্যাত্মিকতার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। সৃষ্টি, ধর্ম এসব নিয়েও তিনি ভাবতেন। এই সৃষ্টির বিস্ময় তার কবিতায় উঠে এসেছে নানাভাবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, আল মাহমুদ আমাদের অন্তরে চির জাগরূক। যারা কবিতার সাধক আল মাহমুদ তাদের কাছে চিরজীবী। যারা কবিতাকে ভালোবাসেন তাদের কাছে আল মাহমুদের মৃত্যু নেই।

আসাদ চৌধুরী বলেন, ভাষাকে নিজস্বতা দিতে পেরেছিলেন কবি আল মাহমুদ। তিনি সেই বিরল কবিদের একজন যাকে শনাক্ত করতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। আল মাহমুদ তার জন্ম থেকেই এই বাংলার মাটি আকাশ নদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি যত না বই পড়েছেন তারচেয়ে বেশি বাংলার প্রকৃতিকে পাঠ করেছেন, উপলব্ধি করেছেন।

মুক্তিযোদ্ধা হয়েও আল মাহমুদ রাষ্ট্রীয় সম্মান না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বক্তারা। তারা বলেন, কবি আল মাহমুদকে নিয়ে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে তা দূর হবে। তিনি মানুষের কাছে ভালোবাসার কবি হয়ে বেঁচে থাকবেন আগামীর দিনগুলোতে।

অনুষ্ঠানের আলোচনায় আরও অংশ নেন কবি হাসান হাফিজ, কবি আবদুল হাই শিকদার, কবি রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন, কবি শাহীন রেজা, কবি আতাহার খান প্রমুখ।

আলোচনা ও স্মৃতিচারণের ফাঁকে ফাঁকে কবি আল মাহমুদের কবিতা পাঠ করেন নাসিম আহমেদ, সীমা ইসলাম, শামীমা চৌধুরী, হাফসা মাহমুদ প্রমুখ। কবিকে নিবেদিত কবিতা পাঠ করেন কবি হাসান হাফিজ, মতিন বৈরাগী, বকুল আশরাফ, কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ, জাফর আহসান প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কবি আল মাহমুদ মৃত্যুবরণ করেন।

সর্বশেষ খবর