বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলনে-বলনে দারুণ স্মার্ট। চড়েন দামি গাড়িতে। সঙ্গে থাকা একজন সুপারিনটেনডেন্ট এবং কাস্টমসের ইউনিফর্ম পরিহিত মধ্যবয়স্ক নুরুল হককে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তিনি একজন ভুয়া সহকারী কাস্টমস কমিশনার। তার নেতৃত্বে শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের চাকরি দেওয়া ও কাস্টমসের জব্দ করা পণ্য ব্যবসায়ীদের কাছে কম মূল্যে বিক্রির নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিত এ চক্রটি। রাজধানীর মিরপুরে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তার ছদ্মবেশে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ছয়জন সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪-এর একটি দল। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন মো. নুরুল হক, শেখ আলম, ফিরোজ আলম, মো. মোশারফ, মাসুদ রানা, রেণু মিয়া ওরফে রনি। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভিজিটিং কার্ড, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করে র‌্যাব।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির। তিনি বলেন, সংঘবদ্ধ এই প্রতারক চক্রের প্রধান নুরুল হক (৫৭)। তিনি নিজেকে কাস্টমসের সহকারী কমিশনার পরিচয় দিতেন। এই প্রতারক ভুক্তভোগীদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য দামি গাড়ি হাঁকাতেন। সুপারিনটেনডেন্ট ছাড়াও মাঠে কাজ করতেন একজন অফিস সহকারী, গাড়িচালকসহ অন্তত সাতজন ব্রোকার। নুরুল হকের নামে এমন প্রতারণার অভিযোগে চট্টগ্রামসহ রাজধানীতে তিনটি মামলা আছে। নুরুল হক দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে এমন প্রতারণা করে আসছিলেন। চক্রটির মাঠপর্যায়ে কিছু সদস্য আছে, যারা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে টার্গেট ভুক্তভোগী ও গ্রাহক চিহ্নিত করে। তারপর মানুষ অনুযায়ী কৌশল নির্ধারণ করে প্রতারণায় ফেলে।

চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বলেন, প্রতারণার কৌশল হিসেবে প্রতারক চক্রটি শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীকে কাস্টমস অফিসার হিসেবে চাকরি দেওয়ার লোভনীয় অফার দিত। এজন্য মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করত তারা। প্রতারক চক্রের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, নিরাপদ স্থানে কাস্টমস র‌্যাঙ্ক, ব্যাজ, ইউনিফর্ম পরিহিত, দামি ব্র্যান্ডের গাড়িতে ভিকটিমদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য সাক্ষাৎ করতেন নুরুল হক। ভুক্তভোগীরা নুরুল হককে দেখে বিশ্বাস করতেন এবং টাকার অঙ্ক নির্ধারণ করতেন। এরপর সুকৌশলে প্রতারক চক্রটি ভিকটিমের নিয়োগপত্র হস্তান্তর করার তারিখের আগেই নানা অজুহাতে মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য করত এবং টাকা হাতিয়ে নিয়ে মোবাইল সিম বন্ধ করে আত্মগোপন করত।

মঞ্জুরুল কবির আরও বলেন, এই প্রতারক চক্র বিভিন্ন কোম্পানির ডিলারদের টার্গেট করেও প্রতারণা করত। কাস্টমসে জব্দ করা সোনার বার, বিস্কুট, জাপানি পার্টস, কটন সুতা, গোল্ডেন সুতা, সোনার চেইন, মোবাইল ফোন সেট, টিভি, ল্যাপটপ ইত্যাদি কম মূল্যে বিক্রির অফার দিত। লোভনীয় অফারে প্রলুব্ধ হয়ে কিনতে আগ্রহী হতেন ব্যবসায়ীরা। প্রতারক চক্র কৌশলে মালামাল দেওয়ার নির্ধারিত তারিখ ঠিক করত এবং মূল্যের একটি অংশ অগ্রিম হিসেবে আদায় করে, ভুয়া চুক্তিনামা তৈরি করে অগ্রিম হিসেবে হাতিয়ে নিত লাখ লাখ টাকা। এই চক্রের বাকি সদস্যদেরও খোঁজা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর